*বর্তমান যুগে কম্পিউটার, মোবাইল, ট্যাবলেট ইত্যাদির অতিরিক্ত ব্যবহার, অনিয়মিত জীবনযাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে অনেকেই অল্প বয়সেই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছেন। আগে যেখানে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া ছিল মূলত বয়সজনিত সমস্যা।সাধারনত ৪০ বছর বয়সের উর্ধ্বে গেলে তবেই চোখর দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে সেখানে এখন ২০–৩০ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরাও এই সমস্যায় ভুগছেন। এমনকি শৈশবেও দেখা দিচ্ছে এই সমস্যা। এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো কেন এমনটা হচ্ছে, কী কী লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হওয়া উচিত এবং কীভাবে সহজে প্রতিকার করা যেতে পারে।
*চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলো কী?
১. দূরের বা কাছের জিনিস অস্পষ্ট দেখা।
২. প্রচণ্ড চোখের ব্যথা বা চাপ অনুভব করা।
৩. চোখে ঝাপসা দেখা বা দুটো করে জিনিস দেখা।
৪. প্রচুর সময় স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার পর চোখ জ্বালাপোড়া করা।
৫. আলোতে চোখে অস্বস্তি অনুভব হওয়া বা চোখ ছলছল করা।
৬. অন্ধকারে বা রাতে পরিষ্কার দেখতে সমস্যা হওয়া (Night blindness)।
৭. চোখের সামনে কালো দাগ বা বিন্দু দেখা (Floaters)।
৮. বারবার মাথাব্যথা হওয়া, বিশেষ করে পড়াশোনা বা স্ক্রিন দেখার পর
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দেরি না করে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
*অল্প বয়সে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার মূল কারণগুলো কী?
ল্যাপটপ, মোবাইল বা টিভির দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চোখে চাপ পড়ে। এটি চোখের পেশিগুলোর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে।
২. অপর্যাপ্ত ঘুম:
চোখের ক্লান্তি দূর করতে পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে চোখ ঠিকভাবে বিশ্রাম পায় না, যার ফলে দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৩. ভিটামিন ও পুষ্টির অভাব:
ভিটামিন A, C, E, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, জিঙ্ক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসবের ঘাটতি থাকলে চোখ দুর্বল হয়ে পড়ে।
৪. জেনেটিক কারণ:
পারিবারিক ইতিহাস থাকলে অল্প বয়সে চোখের সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বিশেষত, মায়োপিয়া (Myopia) ও হাইপারোপিয়া (Hyperopia)।
৫. ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন:
এসব রোগের কারণে চোখে রক্ত চলাচলে সমস্যা হয় এবং রেটিনার ক্ষতি হতে পারে, যা দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৬. অ্যালার্জি বা চোখে সংক্রমণ:
চোখে বারবার চুলকানি বা ইনফেকশন হলে কর্নিয়া বা রেটিনায় ক্ষতি হয় এবং দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে।
*দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে করণীয়: প্রতিকারের সহজ ও কার্যকর উপায়
১.
২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলুন:
প্রতি ২০ মিনিট পর পর স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরে তাকান। এটি চোখের উপর চাপ কমায়।
জল চোখের শুষ্কতা দূর করে এবং রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে।
৫. সানগ্লাস ব্যবহার করুন:
সূর্যের UV রশ্মি চোখের জন্য ক্ষতিকর। বাইরে বের হলে সানগ্লাস পরা অভ্যাস করুন।
৬. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান:
প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো চোখের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
৭. মোবাইল/কম্পিউটার ব্যবহারে সতর্ক থাকুন:
Blue light filter ব্যবহার করুন
স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা খুব বেশি বা কম না রাখুন
স্ক্রিন থেকে অন্তত ১৬–১৮ ইঞ্চি দূরে থাকুন
*চোখের যত্নে ঘরোয়া উপায়: (Home Remedies)
১. গাজরের রস:
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস গাজরের রস পান করুন।
২. ত্রিফলা চূর্ণ:
রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে সেই পানি দিয়ে চোখ ধুতে পারেন।
৩. শসার টুকরো চোখে রাখা:
এটি চোখের ক্লান্তি ও ফোলাভাব দূর করতে সাহায্য করে।
৪. গোলাপজল:
তুলোয় গোলাপজল দিয়ে চোখের উপর ১০ মিনিট রাখলে চোখ ঠাণ্ডা হয়।
৫. মাঝে মাঝে চোখে জলের ঝাপটা দিলেও চোখ ভালো থাকে।
***কবে ডাক্তার দেখানো জরুরি?
১. হঠাৎ করে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে গেলে
২. চোখে ব্যথা বা রক্ত পড়লে।
৩. চোখের রঙ পরিবর্তন হলে বা আলোতে অস্বস্তি বাড়লে।
৪. চোখে ঘনঘন ইনফেকশন বা অ্যালার্জি হলে।
শেষ কথা
অল্প বয়সেই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারানোর প্রবণতা বাড়ছে, তবে সচেতন থাকলে এবং সময়মতো পদক্ষেপ নিলে এই সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। সঠিক খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, চোখের ব্যায়াম, এবং নিয়মিত চেকআপ—এই চারটি বিষয়ই চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখার মূলমন্ত্র। আজ থেকেই চোখের যত্ন নিন, কারণ একবার দৃষ্টিশক্তি হারালে তা ফিরিয়ে আনা সহজ নয়।
আপনার চোখের সুস্থতাই আপনার সুন্দর জীবনের চাবিকাঠি। তাই দৃষ্টিশক্তি হারানোর আগেই সচেতন হন।