কিডনি আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি রক্ত পরিশোধন করে ও দেহের বর্জ্য পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ভুল খাদ্যাভ্যাস ও কিছু রোগের কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আজ আমরা জানব— কিডনি কী, এর কাজ কী, কিডনি খারাপ হলে কী হয়, এবং কীভাবে কিডনির যত্ন নেবেন।
কিডনি কি?
কিডনি হলো শরীরের দুটি বিন আকৃতির (bean-shaped) অঙ্গ, যা পিঠের নিচের অংশে মেরুদণ্ডের দুই পাশে অবস্থিত। প্রতিটি কিডনির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০-১২ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১২৫-১৭০ গ্রাম (প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে)।
* কিডনির প্রধান কাজ হলো:
১. রক্ত পরিশোধন করা
২. শরীর থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল বের করা
৩. দেহের লবণ ও খনিজের ভারসাম্য রক্ষা করা
৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা
৫. লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়তা করা
* কিডনি খারাপ হলে কী হয়?
কিডনি যদি ঠিকমতো কাজ না করে, তাহলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়।
কিডনি সমস্যার সাধারণ লক্ষণ:
১. বারবার প্রস্রাব লাগা বা প্রস্রাব কমে যাওয়া
২. হাত-পা, মুখ বা চোখের নিচে ফোলা
৩.শরীরে অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
৪. বমি বমি ভাব ও ক্ষুধামন্দা
৫. ত্বকে চুলকানি
৬ . উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া
কিডনি রোগের সাধারণ কারণ:
১. ডায়াবেটিস: অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড সুগার কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
২.উচ্চ রক্তচাপ: অতিরিক্ত রক্তচাপ কিডনির রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
৩. কম জল পান: পর্যাপ্ত জল না খেলে কিডনিতে পাথর জমতে পারে।
৪. বেশি লবণ ও প্রসেসড খাবার: অতিরিক্ত লবণ খেলে কিডনির উপর চাপ পড়ে।
৫. দীর্ঘদিন ব্যথার ওষুধ সেবন: NSAIDs জাতীয় ব্যথার ওষুধ কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
* কিভাবে কিডনির যত্ন নেবেন?
১. পর্যাপ্ত জল পান করুন – প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লিটার জল পান করুন।
২. সঠিক খাবার খান – লবণ, প্রসেসড ফুড ও অতিরিক্ত প্রোটিন এড়িয়ে চলুন।
৩. ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন – নিয়মিত চেকআপ করুন।
৪. ব্যায়াম করুন – প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন এবং হালকা ব্যায়াম করুন।
৫. ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন – এগুলো কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট করে।
৬. প্রস্রাব চেপে রাখবেন না – দীর্ঘ সময় প্রস্রাব আটকে রাখা কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
৭. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না – বিশেষ করে ব্যথার ওষুধ।
* শেষ কথা
কিডনি সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে সহজেই কিডনির সমস্যাগুলো এড়ানো সম্ভব। যদি উপরের কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার কিডনি সুস্থ থাকুক, ভালো থাকুন!