* কিডনি খারাপ হলে কি কি হয়?
* কিডনি খারাপের লক্ষণ কি?
* কিডনি খারাপ হওয়ার কারণ কি?
* প্রতিকারের সহজ উপায় কি?
ভূমিকা:
কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনি মানব শরীরে একটি ফিল্টার যন্ত্রের মত কাজ করে। রক্তের মধ্যে যেসব বজ্র পদার্থ বিভিন্ন উপায়ে ঢুকে পড়ে, সেইসব বজ্র পদার্থ রক্ত থেকে বের করে রক্তকে দূষণমুক্ত করে অর্থাৎ আমাদের শরীরকে দূষণমুক্ত করে। কিডনি আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বের করে দেয়। কিডনির কি কি কাজ আমি তা আগের ব্লগে আলোচনা করেছি আপনি নিচের লিংকে ক্লিক করে পড়ে নেবেন। কিডনির কর্ম ক্ষমতা কমে গেলে শরীরের মধ্যে বিষাক্ত পদার্থ জমতে শুরু করে এইভাবে ধীরে ধীরে বিষাক্ত পদার্থ জমতে থাকলে একদিন তার কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে যার ফলে শরীরের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। আজকাল বহু মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় কিডনি সমস্যার কথা। কেউ বলেন আমার মামার দুটো কিডনিই খারাপ হয়ে গেছে। কেউ বলেন আমার পিসিমার ডায়ালুসিস চলছে। কেউ বলেন আমার বিশ্বনাথ কাকার হাত-পা ফুলে গেছে কিডনির পরীক্ষা করতে দিয়েছে। এই ধরনের রোগের কথা সচরাচর এখন বেশিরভাগই শোনা যাচ্ছে। অর্থাৎ সমীক্ষা করলে দেখা যাবে এখনকার সমাজে তাদের তুলনায় কিডনির রোগ অনেক গুণ বেড়ে গেছে। এর কারণ আমি আলোচনা করব। WORLD HEALTH ORGANISATION ( WHO ) এর সমীক্ষায় ঠিক একই ব্যাখ্যা প্রকাশ করেছেন। আগের তুলনায় এখন বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়েছে। এখানে কিডনির রোগের কথাও উল্লেখ করা আছে।
“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, আগের তুলনায় বর্তমানে বিভিন্ন জটিল রোগের প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এর মধ্যে কিডনি রোগের হারও আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যঝুঁকির একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
প্রথমে আমি আপনার সামনে পয়েন্টগুলো তুলে ধরবো। তারপর আমি বিস্তারিত আলোচনা করব পয়েন্ট ধরে ধরে।
১. কিডনি খারাপ হলে কি কি হয়?
(ক) শরীরে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল জমে ।
(খ) ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।
(গ) ব্লাড প্রেসার অর্থাৎ রক্তচাপ বেড়ে যায়।
(ঘ) অ্যানিমিয়া অর্থাৎ রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
(ঙ) হাড় দুর্বল হয়ে যায়।
(চ) নিউরোলজিক্যাল অর্থাৎ স্নায়ুবিক সমস্যা দেখা দেয়।
* এবার আমি পয়েন্ট ধরে ধরে বিস্তারিত আলোচনা করবো
১.(ক) কিডনি খারাপ হলে কি কি হয়?
শরীরে বজ্র পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল জমে: কিডনি যেহেতু আমাদের শরীরের একটি ফিল্টার যন্ত্র তাই যখন কিডনি খারাপ হয়ে যায় তখন ফিল্টারের কাজেও ব্যাঘাত ঘটে। কিডনি যখন রক্তকে ফিল্টার করতে পারেনা তখনই শরীরে অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ প্রথমে রক্তের মধ্যে ঘুরে বেড়ায় এবং পরে শরীরের মধ্যে আনাচে-কানাচে জমতে থাকে । যার ফলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় এবং বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত বজ্র পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল শরীরে জমতে থাকার কারণে হাত পা থেকে মাথা পর্যন্ত সারা শরীর ফুলতে থাকে । প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দেওয়ার কারণে সারা শরীর ফোলে। এই সময় প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় বা কখনো আবার একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এই সময় প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হয়ে যায়।
(খ) ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য হারিয়ে যায়:
কিডনির কাজই হচ্ছে রক্ত থেকে বর্জ্য এবং অতিরিক্ত পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট (যেমন: সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম) ফিল্টার করে শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখা। কিন্তু যখন কিডনি খারাপ হয়ে যায় বা ঠিকভাবে কাজ করে না, তখন সোডিয়াম শরীরে জমে গিয়ে রক্তচাপ বাড়ায়। শরীর ফুলে যায়। তখন আমরা এটাকে বলি ইডিমা (EDEMA)। রক্তের মধ্যে পটাশিয়াম বেড়ে গিয়ে হার্ট অ্যারিদমিয়া বা হৃদস্পন্দনের সমস্যা তৈরি করে যেটা শরীরের পক্ষে খুব বিপদজ্জনক। কিডনি ক্যালসিয়াম ও ফসফেট এর ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিডনি খারাপ হলে শরীরের অ্যাসিড বেড়ে যায় যাকে আমরা বলি মেটাবলিক এসিডোসিস। কিডনি ঠিকমত ফিল্টার না করতে পারার জন্য ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।
(গ) ব্লাড প্রেসার অর্থাৎ রক্তচাপ বেড়ে যায়:
কিডনি খারাপ হলে রক্তের মধ্যে বিষাক্ত পদার্থ জমতে থাকে ফলে রক্ত দূষিত হয়ে যায়, যার ফলে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায় বা রক্তচাপ বেড়ে যায়।
(ঘ) অ্যানিমিয়া অর্থাৎ রক্তাল্পতা দেখা দেয়:
কিডনি খারাপ হয়ে গেলে রক্তের সমতা হারিয়ে যায় তাই রক্তাল্পতা দেখা দেয়।
(ঙ) হাঁড় দুর্বল হয়ে যায়:
কিডনি ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। কিডনি যখন খারাপ হয়ে যায় তখন ক্যালসিয়াম ঠিকমতো শোষিত হয় না। সেই কারণেই হাঁড় দুর্বল হয়ে যায়।
(চ) নিউরোলজিক্যাল অর্থাৎ স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয:
যখন কিডনি খারাপ হয়ে যায় (বিশেষ করে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা কিডনি ফেলিওর), তখন শরীরের মধ্যে নানা ধরনের বিষাক্ত পদার্থ (toxins) জমে যেতে থাকে, যেগুলো সাধারণত প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যেত কিন্তু বেরিয়ে যায়নি। এই বিষাক্ত পদার্থগুলো রক্তের সঙ্গে মস্তিষ্কে পৌঁছে গেলে নানা রকম স্নায়ুবিক (Neurological) সমস্যা তৈরি হয়।
২. কিডনি খারাপের লক্ষণ:
(ক) প্রস্রাবের পরিবর্তন:
কিডনি খারাপ হলে প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হয়ে যায়। কখনো প্রস্রাবের রঙ লাল হয়ে যায়। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়।
(খ) শরীর ফুলে যায়:
কিডনি যেহেতু আমাদের শরীরের একটি ফিল্টার যন্ত্রের মত কাজ করে, যখন কিডনি বিকল হয়ে যায় তখন ফিল্টারের কাজেও ব্যাঘাত ঘটে এবং শরীরের বজ্র পদার্থ হতে পারে না। তাই শরীরে অতিরিক্ত বজ্র পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল পদার্থ জমতে থাকে এবং সেই কারণেই সারা শরীর ফুলে যায়।
(গ) অতিরিক্ত ক্লান্তি:
কিডনি যখন খারাপ হয়ে যায় তখন আমাদের শরীরের ৯০ শতাংশ সিস্টেম ব্রেক করে। ঐ সময় শোষন, শ্বসন ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয় না তাই ঐ সময় অতিরিক্ত শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়।
(ঘ) বমি বমি ভাব হয়:
কিডনি যখন খারাপ হয়ে যায় তখন আমাদের শরীরের প্রায় বেশিরভাগ অঙ্গই ৫০ শতাংশ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। লিভার এবং পাকস্থলী যখন খাদ্য হজমের পূর্ণ দায়িত্ব পালন করে না তখন বমি বমি ভাব তো হবেই এবং কখনো কখনো বমি হয়েও যাবে।
(ঙ) খিদে কমে যায়:
আমাদের মানব শরীর একটা শৃঙ্খলের মধ্যে আবদ্ধ আছে বা যুক্ত আছে। একটি অঙ্গ আর একটি অঙ্গের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই যখন কিডনি বিকল হয়ে পড়ে তখন পাকস্থলী, লিভার বৃহদান্ত্র এবং ক্ষুদ্রান্ত্র সবাই আপন কর্ম থেকে কিছুটা পিছিয়ে আসে। তাই ঐ খিদে কমে যায়।
(চ) ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়:
কিডনি যখন রক্তকে পরিশোধিত করতে অক্ষম হয়ে পড়ে তখন রক্তের মধ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় বজ্র পদার্থ ও অতিরিক্ত মাত্রায় টক্সিন জমে যায় এবং সেগুলো ধীরে ধীরে চামড়ার উপর বা ত্বকের উপর ভেসে উঠতে থাকে। ধীরে ধীরে চামড়ার রোগ বা স্কিন ডিজিজ হয়।
(ছ) High Blood Pressure অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়:
কিডনি খারাপ হয়ে গেলে রক্তকে পরিশোধিত করতে পারেনা বা রক্তকে দূষণমুক্ত করতে পারে না। রক্তের মধ্যে ঘুরে বেড়ানো অতিরিক্ত বজ্র পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল পদার্থ এবং টক্সিন শরীরের মধ্যে থেকে বের করতে পারে না। এই সমস্ত পদার্থ গুলি যখন শরীরের মধ্যে অতিরিক্ত হয়ে যায় তখন রক্ত নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে যার ফলে হৃদপিন্ডের ওপর চাপ পড়ে। তাই ওই সময় হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়।
(জ) শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়:
কিডনি রক্তকে ঠিকঠাক দূষণমুক্ত না করতে পারার জন্য রক্তের মধ্যে অতিরিক্ত তরল পদার্থ, অতিরিক্ত বজ্র পদার্থ জমে যায় এবং সেই অতিরিক্ত জল ধীরে ধীরে ফুসফুসের মধ্যে ঢুকে গিয়ে শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে।
(ঝ) ঘুমের সমস্যা হয়:
ঘুম একটি শান্তির জিনিস। সারা শরীর যখন কিডনি খারাপ হয়ে যাওয়ার ফলে অশান্তিতে বা অস্বস্তিতে ভোগে তখন কিছুতেই বা কোনমতেই ঘুম আসতে পারে না।
৩. কিডনি খারাপ হওয়ার কারণ:
কিডনি খারাপ হয়ে যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিভিন্ন কারণের মধ্যে আমি প্রধান কারণ গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
(ক) হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ যদি দীর্ঘদিন থাকে তাহলে কিডনির রক্তনালীর ক্ষতি করে। যার ফলে ধীরে ধীরে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এমন একটা দিন জীবনে নেমে আসে সেদিন কিডনি পুরোপুরি খারাপ হয়ে যায় সেদিন আর কিছু করার থাকে না। যেমন আমাদের পাড়ার প্রফুল্লদার হাই ব্লাড প্রেসার থেকে কিডনি খারাপ হয়ে গিয়ে মারা গেলেন। কিডনি এবং হাই ব্লাড প্রেসার এর মধ্যে সম্পর্ক বলে দিই যদি দীর্ঘদিন হাই ব্লাড প্রেসার থাকে তাহলে কিডনি খারাপ হয়ে যাবে আর যদি কোন কারণে একবার কিডনি খারাপ হয়ে যায় তাহলে ওই রোগী হাই ব্লাড প্রেসার দেখা দেবে। যা নিয়ন্ত্রণে আনা খুবই মুশকিল হয়ে পড়ে। অতএব এখানে আমাদের করণীয় উচিত কিডনির ও যত্ন নিতে হবে হাই ব্লাড প্রেসারও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বর্তমান সময়ে অনিয়মিত জীবনযাত্রার কারণে এই দুই ধরনের অর্থাৎ হাই ব্লাড প্রেসার এবং কিডনির রোগ অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে। প্রায়শই শোনা যায় পাড়ায় পাড়ায় লোকের মুখে মুখে কিডনির রোগের কথা। এ বিষয়ে আরো জানতে নিচের লিংকগুলোতে ক্লিক করুন।
(খ) ডায়াবেটিস অর্থাৎ বহুমূত্র রোগ:
দীর্ঘদিন যদি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ডায়াবেটিস থাকে তাহলে আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ কিডনির উপর চাপ পড়ে এবং কিডনির নেফ্রন অর্থাৎ ফিল্টার নষ্ট হয়ে যায়।
(গ) অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যথা নাশক ঔষধ খাওয়া:
এখন প্রায়শই দেখা যায় একটু ব্যথা হলেই ঔষধের দোকানে গিয়ে নিজে মুখে বলে পেনকিলার ঔষধ খায়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এইভাবে নিয়মিত ব্যাথার ঔষধ খেলে কিডনির ক্ষতি করে। এখন এই ধরনের মানুষ বা রোগী বেশিরভাগই দেখতে পাওয়া যায় যারা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেন তাদের মধ্যে এই ধরনের মানসিকতা দেখতে পাওয়া যায়। যেমন টলি চালক রিক্সা চালক কাঠমিস্ত্রি কারখানার শ্রমিক ইত্যাদি আরো অনেক মানুষদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। তারা স্বল্প ইনকাম করে তাই সবসময় ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারে না। অনেক সময় দেখা যায় সময়ের অভাবেও তারা চিকিৎসকের কাছে যেতে পারে না। তারা প্রতিদিনই বলেন আজকের মত অর্থাৎ আপাতত দুটো ব্যাথার ট্যাবলেট খেয়ে ব্যথাটাকে কমিয়ে নেই না হলে আগামী দিন কাজে যেতে পারবো না। এইভাবে বলে বলে কয়েকদিন কয়েক মাস কয়েক বছর কেটে যায় তবু ভালো চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ব্যথার আসল কারণ খোঁজার চেষ্টা করেনা। আমি একজন চিকিৎসক তাই আমি তাদেরকে সৎ উপদেশ দিয়েও তাদেরকে বুঝিয়ে উঠতে অক্ষম হয়েছি। আমার নিজের চোখে দেখা কয়েকজন মানুষ ব্যথার ওষুধ অতিরিক্ত খেয়ে কিডনি ফেলিওর হয়ে মারা গেলেন। আরো বিস্তারিত জানতে নিচের বিষয়গুলির উপর নজর দিন উনার জন্য আরো তথ্যবহুল লেখা আছে। WHO (Word Health Organization) -এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী বলা যায় ৪০ শতাংশ রোগী ব্যাথার ঔষধ খেয়ে কিডনি খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
(ঘ) অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন:
অধিকাংশ মানুষই সকাল থেকে শুরু করে অনিয়ম। যেমন ধূমপান, মদ্যপান। অনেকেই ঘুম থেকে উঠেই বিড়ি বা সিগারেট ধরিয়ে পায়খানায় চলে যান। তারা বলেন ধূমপান না করলে নাকি তাদের পায়খানা হয় না। মানুষ হচ্ছে অভ্যাসের দাস। যা অভ্যাস করবে তাই হবে। এই যে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে জল না খেয়ে ধুমপান শুরু করে এটা একটা বড় অনিয়ম। কেউ কেউ আবার ঘুম থেকে উঠেই মদ্যপান শুরু করে দেয়। যার কারনে কিডনির ওপর খুব চাপ পড়ে এবং কিডনির নেফ্রন অর্থাৎ ফিল্টার খারাপ হয়ে যায়। জল কম খেলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘদিন জল কম খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হলে রক্তে ইউরিয়া, ক্রিয়েটি নাইন এর মাত্রা বেড়ে গিয়ে কিডনির ক্ষতি করে।
(ঙ) সংক্রমণ বা ইনফেকশন (Infection):
কোন কারণবশত যদি কিডনি সংক্রামিত হয় আর এই সংক্রমণ যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে তাহলে কিডনি তার কর্মক্ষমতা হারাতে থাকে এবং একদিন পুরোপুরি কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
(চ) জেনেটিক বা বংশগত কারণ:
বংশগত কারণের জন্যও কিডনি খারাপ হয়ে যায়। এটিকে বলা হয় পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিস (PKD) । যেমন – সুগার বা ডায়াবেটিস এবং হাই প্রেসার বংশগত রোগ। এই রোগ থেকেও কিডনি খারাপ হয়ে যেতে পারে। বংশগত কারণে কি কি রোগ হয় আমার ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে আপনারা পড়ে নেবেন। নিচের লিংকে ক্লিক করুন https://arogyabani.com/
(ছ) অতিরিক্ত আমিষ প্রোটিন খাওয়া:
আমিষ প্রোটিন বেশি খেলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। যেমন- মাছ, মাংস, ডিম অতিরিক্ত খাওয়া ভালো না। যদিও মাসে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার কারণে হার্ট ভালো থাকে। অতিরিক্ত বড় মাছ অতিরিক্ত খাওয়া ভালো না। নিয়মিতভাবে এবং পরিমাণ মতো ছোট মাছ খেলে কোন ক্ষতি হয় না।
(জ) অতিরিক্ত লবণ খাওয়া:
অতিরিক্ত লবণ খেলে কিডনির ক্ষতি হয়। প্রতিদিন ৫ গ্রাম বা তার কম লবণ খান। প্রতিদিন পাঁচ গ্রামের বেশি লবণ খেলে কিডনির ওপর চাপ পড়ে। অনেকে ভাতের সঙ্গে কাঁচা লবণ খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করেছেন। এটা খুবই খারাপ অভ্যাস। আমি একজন চিকিৎসক হিসাবে কাঁচালাবন খেতে নিষেধ করলে ওই রোগী বলেন লবণ টা কি ভেজে খাবো? এটাও সঠিক পদ্ধতি নয়।
(ঝ) অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার খাওয়া:
অনেকে অতিরিক্ত লবণ দিয়ে তরকারি রান্না করে। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিদিন পাঁচ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া ঠিক নয়।
৪. প্রতিকারের সহজ উপায়:
কিডনি সুস্থ রাখতে হলে জীবনে কিছু পরিবর্তন বা সু-অভ্যাস তৈরী করতে হবে। যেমন –
(ক) পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা:
প্রতিদিন ৩ থেকে ৩.৫ লিটার জল পান করা উচিত। তবে যদি আগের থেকেই কিডনি ফেলিওর হয়ে থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
(খ) সুষম খাদ্য গ্রহণ করা:
যেমন দুধ একটি সুষম খাদ্য। প্রথম থেকেই দুধ খেয়ে হজম করার অভ্যাস তৈরি করে রাখুন। যাতে কিডনি সুস্থ থাকে। প্রতিদিন পাঁচ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।
(গ) স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া:
প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, পরিমাণ মতো ফলমূল, এবং পরিমাণ মতো গোটা শষ্য খান। বেশি প্রক্রিয়াজাত খাবার খাবেন না। যেমন ফার্স্টফুড খাবেন না।
(ঘ) ব্লাড সুগার অর্থাৎ রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা:
প্রতিদিন ক্যালোরি হিসাব করে খাওয়া দাওয়া করা উচিত। যদি ব্লাড সুগার এসে গিয়ে থাকে তাহলে নিয়মিত ব্লাড সুগার চেক আপ করুন। রক্তে যদি শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে বা ডায়াবেটিস থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন এবং সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
(ঙ) ধুমপান বন্ধ করা:
ধুমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব ক্ষতিকর। ধুমপান ধীরে ধীরে ফুসফুসের সিস্টেম কে ব্রেক করে যার ফলে কিডনির উপর চাপ পড়ে এবং কিডনির রক্তনালীর ক্ষতি করে।
(চ) মদ্যপান বন্ধ করা:
মদ সরাসরি কিডনির রক্তনালীর ক্ষতি করে তাই মদ্যপান বন্ধ করুন।
(ছ) High Blood Pressure বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা:
চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। (হাইপারটেনশন)
(জ) নিয়মিত শরীরচর্চা ও যোগব্যায়াম করা:
প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটুন, যোগব্যায়ামের অভ্যাস করুন।
(ঝ) অপ্রয়োজনীয় ঔষধ খাওয়া বন্ধ করুন:
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। ব্যাথানাশক ঔষধ তো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাবেনই না।
(ঞ) Urine infection বা সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
যদি প্রস্রাবের সমস্যা হয় তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ দেরি করলে সংক্রমণ টা কিডনি পর্যন্ত ছড়িয়ে।
(টা) ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা:
শরীরের অতিরিক্ত ওজন কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে BMI ঠিক থাকলে কিডনি ভালো থাকে।
(ঠ) স্ট্রেস কমানো:
প্রাণায়াম অভ্যাস করুন, ধ্যান করুন, মেডিটেশন করুন। এই গুলো করলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং কিডনি ভালো থাকে।
উপসংহার:-
কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শরীরের ফিল্টার এর কাজ করে শরীরের বজ্র পদার্থ বের করে। যদি কিডনির সমস্যা সম্পর্কে প্রাথমিক পর্যায়ে সচেতন না হই , তাহলে এটা ক্রনিক কিডনি ডিজিস (CKD) হয়ে যায় এবং পরে কিডনি ফেলিওর হয়ে যায়। তাই ওপরের লক্ষন গুলো দেখা দিলে দেরি না করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।