ক্যান্সার: লক্ষণ, কারণ, ধরণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সম্পূর্ণ গাইড
ক্যান্সার সম্পর্কে সম্পূর্ণ গাইড, ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিকার ক্যান্সার কী, এর লক্ষণ, কারণ, ধরণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এই সম্পূর্ণ গাইডে। ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিকার জানতে পড়ুন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ, যা আপনাকে সচেতন ও সতর্ক হতে সাহায্য করবে।
ভূমিকা:
বর্তমান যুগে ক্যান্সার একটি ভয়ংকর ও প্রাণঘাতী রোগ হিসেবে পরিচিত, যা প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। শরীরের কোষসমূহ যখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয়ে একত্রিত হয় এবং আশেপাশের সুস্থ কোষে ছড়িয়ে পড়ে, তখনই ক্যান্সার তৈরি হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগের লক্ষণ অনেক সময় স্পষ্ট না হলেও, সচেতনতা ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এটি অনেকাংশে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই ব্লগে আমরা জানব ক্যান্সার কী, এর মূল কারণ, লক্ষণ, বিভিন্ন ধরণ এবং চিকিৎসা ও প্রতিকার সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যা আপনাকে ও আপনার পরিবারকে সচেতন থাকতে সাহায্য করবে।
এবার আমরা ক্যান্সার সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করব
১. ক্যান্সার কি?
২. ক্যান্সারের কারণ:
৩. ক্যান্সারের লক্ষণ:
৪. ক্যান্সারের ধরন:
৫. ক্যান্সারের চিকিৎসা।
৬. ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়।
এবার আমি আপনাদের সামনে একটা একটা করে তুলে ধরব।
১. ক্যান্সার কি?
ক্যান্সার হলো এমন একটি রোগ, যেখানে শরীরের কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বিভাজিত হতে শুরু করে এবং নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে ওঠে। এই কোষগুলো আশেপাশের সুস্থ কোষগুলোর উপর আক্রমণ করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাধারণত, আমাদের শরীরের কোষগুলো একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকে এবং তারপর ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, কোষগুলো ধ্বংস না হয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে ও টিউমার তৈরি করে। কিছু ক্যান্সার টিউমার ছাড়াও রক্তে বা হাড়ের মজ্জায় (যেমন: লিউকেমিয়া) ছড়িয়ে পড়ে।
ক্যান্সার অনেক ধরনের হতে পারে এবং প্রতিটি ধরনের লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি আলাদা। তাই ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা এবং প্রাথমিক লক্ষণ চিহ্নিত করাই এর প্রতিকার ও প্রতিরোধের প্রথম ধাপ।
২. ক্যান্সারের কারণসমূহ:
ক্যান্সার হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। কিছু কারণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, কিছু কারণ জেনেটিক বা জন্মগতভাবে শরীরের ভেতরেই থাকে। নিচে ক্যান্সারের সম্ভাব্য প্রধান কারণগুলো তুলে ধরা হলো:
২./(ক) ধূমপান ও তামাক সেবন:
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন ক্যান্সারের অন্যতম বড় কারণ। বিশেষ করে ফুসফুস, মুখ, গলা ও খাদ্যনালীতে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি বাড়ে।
(খ) অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
অতিরিক্ত তেল-মশলা, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্টফুড ও কম ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস শরীরে টক্সিন জমতে সাহায্য করে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
(গ) শরীরচর্চার অভাব ও স্থূলতা:
পর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপের অভাব ও অতিরিক্ত ওজনও ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়, বিশেষ করে স্তন, কোলন ও কিডনি ক্যান্সারের ক্ষেত্রে।
(ঘ) অ্যালকোহল সেবন:
নিয়মিত ও অতিরিক্ত মদ্যপান লিভার, মুখ, গলা এবং খাদ্যনালীর ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হতে পারে।
(ঙ) পরিবেশ দূষণ ও রেডিয়েশন:
দূষিত বায়ু, রাসায়নিক পদার্থ, বিষাক্ত গ্যাস ও অতিরিক্ত সূর্যরশ্মির সংস্পর্শেও ক্যান্সারের কোষ তৈরি হতে পারে।
(চ) ভাইরাস ও সংক্রমণ:
কিছু ভাইরাস যেমন HPV (Human Papilloma Virus), হেপাটাইটিস বি ও সি – ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এই ভাইরাসগুলো দীর্ঘদিন শরীরে থাকলে কোষে মিউটেশন ঘটাতে পারে।
(ছ) বংশগত বা জেনেটিক কারণ:
কোনো ব্যক্তির পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে, তার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।
(জ) হরমোনজনিত পরিবর্তন ও দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ:
কিছু হরমোন থেরাপি ও দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত কিছু ওষুধ শরীরের কোষে পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
৩. ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ:
ক্যান্সারের লক্ষণ ব্যক্তি ও রোগের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। অনেক সময় প্রাথমিক অবস্থায় কোনো স্পষ্ট উপসর্গ দেখা না দিলেও, কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা ক্যান্সারের ইঙ্গিত দিতে পারে। নিচে ক্যান্সারের সম্ভাব্য সাধারণ লক্ষণগুলো তুলে ধরা হলো:
৩/(ক) দীর্ঘদিন ধরে চলা কাশি বা গলার স্বর পরিবর্তন:
যদি কোনো কাশি ৩ সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় ধরে ভালো না হয় বা গলার স্বর পরিবর্তিত থাকে, তাহলে তা ফুসফুস বা গলার ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
(খ) অজানা কারণে ওজন হ্রাস:
কোনো ডায়েট বা ব্যায়াম ছাড়াই হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া অনেক সময় শরীরের কোষে অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত হতে পারে।
(গ) দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি ও দুর্বলতা:
যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়ার পরেও যদি শরীরে সবসময় ক্লান্তি ও দুর্বলতা থাকে, তবে তা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
(ঘ) শরীরের কোথাও অস্বাভাবিক ফোলা বা গাঁট:
যদি শরীরের কোনো অংশে গাঁট বা স্ফীতি দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে, তা অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
(ঙ) রক্তপাত বা ক্ষত সারতে দেরি হওয়া:
মুখ, প্রস্রাব বা পায়খানার সময় অস্বাভাবিক রক্তপাত বা কোনো ক্ষত দীর্ঘদিনেও না শুকালে তা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
(চ) হজমে সমস্যা ও গলার মধ্যে খাবার আটকে যাওয়ার অনুভব:
নিয়মিত হজমে সমস্যা, বমি বমি ভাব, কিংবা খাবার গিলতে অসুবিধা – এগুলো গ্যাস্ট্রিক বা খাদ্যনালী ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
(ছ) ত্বকে পরিবর্তন:
তিল বা ত্বকের কোনো অংশের রঙ, আকার বা গঠনে পরিবর্তন হওয়া ত্বকের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
(জ) প্রস্রাব বা পায়খানার অভ্যাসে পরিবর্তন:
হঠাৎ করে প্রস্রাব বা মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন দেখা দিলে, বিশেষ করে রক্ত গেলে, তা কোলন, ব্লাডার বা প্রোস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
টিপ: এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত হলে প্রতিকার অনেক বেশি সম্ভব।
৪. ক্যান্সারের ধরণ:
ক্যান্সার অনেক ধরনের হতে পারে, এবং প্রতিটি ক্যান্সারের বৈশিষ্ট্য, লক্ষণ, প্রভাব ও চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত ক্যান্সারকে তার উৎপত্তিস্থল ও কোষের প্রকার অনুযায়ী ভাগ করা হয়। নিচে ক্যান্সারের প্রধান কিছু ধরণ তুলে ধরা হলো:
৪/(ক) কার্সিনোমা (Carcinoma):
এটি সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সারের ধরন। এটি ত্বক, ফুসফুস, স্তন, কোলন, প্রোস্টেট, পাকস্থলী ইত্যাদি অঙ্গের টিস্যুতে শুরু হয়।
(খ) সারকোমা (Sarcoma):
সারকোমা সাধারণত হাড়, পেশি, চর্বি, রক্তনালী বা অন্যান্য সংযোজক টিস্যুতে উৎপন্ন হয়। এটি তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়।
(গ) লিউকেমিয়া (Leukemia):
লিউকেমিয়া হলো রক্ত ও অস্থিমজ্জার (bone marrow) ক্যান্সার। এতে রক্তে অস্বাভাবিক শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বেড়ে যায় এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
(ঘ) লিম্ফোমা (Lymphoma):
এই ধরনের ক্যান্সার লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমে (lymph nodes, spleen, thymus ইত্যাদি) দেখা যায়, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অংশ।
(ঙ) মেলানোমা (Melanoma):
মেলানোমা হলো ত্বকের ক্যান্সারের একটি আক্রমণাত্মক ধরণ, যা সাধারণত ত্বকের তিল বা দাগ থেকে শুরু হয়।
(চ) ব্রেন ও স্পাইনাল কর্ড টিউমার:
মস্তিষ্ক ও স্নায়ু তন্ত্রে ক্যান্সার হলে তা ব্রেন টিউমার নামে পরিচিত। এটি আচরণ ও স্নায়বিক ফাংশনে প্রভাব ফেলে।
(ছ) অঙ্গভিত্তিক ক্যান্সার:
স্তন ক্যান্সার (Breast Cancer)
ফুসফুস ক্যান্সার (Lung Cancer)
গলব্লাডার বা যকৃতের ক্যান্সার
কোলন বা রেকটাল ক্যান্সার
প্রোস্টেট ক্যান্সার
সার্ভিকাল ক্যান্সার
এই ধরনের ক্যান্সার শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গে উৎপন্ন হয় এবং আলাদা আলাদা লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি থাকে।
৫. ক্যান্সারের চিকিৎসা:
ক্যান্সার চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের ধরণ, অবস্থান, স্টেজ (পর্যায়), এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর। দ্রুত শনাক্ত করা গেলে অনেক ক্যান্সার এখন সফলভাবে নিরাময়যোগ্য। বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়:
৫/(ক) সার্জারি (Surgery):
যেসব ক্যান্সার শরীরের নির্দিষ্ট অংশে সীমাবদ্ধ থাকে, সেগুলোর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিউমার বা ক্যান্সার আক্রান্ত টিস্যু অপসারণ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে সার্জারি অনেক কার্যকর হতে পারে।
(খ) কেমোথেরাপি (Chemotherapy):
এই চিকিৎসায় শক্তিশালী ওষুধ ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়। কেমোথেরাপি একা বা অন্যান্য চিকিৎসার সঙ্গে মিলিয়েও দেওয়া হতে পারে। যদিও এতে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (চুল পড়া, বমি, দুর্বলতা) থাকতে পারে, তবুও এটি বেশ কার্যকর।
(গ) রেডিয়েশন থেরাপি (Radiation Therapy):
এই পদ্ধতিতে ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন রশ্মি ব্যবহার করা হয়। এটি টিউমারের আকার কমাতে বা সার্জারির পর বেঁচে থাকা ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে সাহায্য করে।
(ঘ) ইমিউনোথেরাপি (Immunotherapy):
এই আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করা হয়। এটি কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারে ভালো ফল দিতে পারে।
(ঙ) হরমোন থেরাপি (Hormone Therapy):
যেসব ক্যান্সার হরমোনের ওপর নির্ভরশীল (যেমন স্তন ক্যান্সার বা প্রোস্টেট ক্যান্সার), সেগুলোর জন্য হরমোন থেরাপি ব্যবহার করা হয়। এটি হরমোন উৎপাদন বা কার্যকারিতা কমিয়ে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে থামায়।
(চ) টার্গেটেড থেরাপি (Targeted Therapy):
এটি এমন একটি চিকিৎসা যেখানে ক্যান্সার কোষের নির্দিষ্ট অংশে আক্রমণ করে কোষ ধ্বংস করা হয়, যাতে স্বাভাবিক কোষের ক্ষতি কম হয়। এটি তুলনামূলকভাবে আধুনিক ও গবেষণাভিত্তিক পদ্ধতি।
চিকিৎসা শুরুর আগে কী করবেন?
প্রথমে একজন অভিজ্ঞ অনকোলজিস্টের (ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ) পরামর্শ নিন।
রোগের ধরণ ও স্টেজ বুঝে চিকিৎসা পরিকল্পনা নির্ধারণ করুন।
দ্বিতীয় মতামত (Second Opinion) নেওয়া অনেক ক্ষেত্রেই উপকারি হতে পারে।
মানসিক শক্তি ও পরিবারিক সহায়তা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৬. ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়:
যদিও সব ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে কিছু সচেতনতা ও জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো যায়। নিচে ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর কিছু উপায় তুলে ধরা হলো:
৬/(ক) তামাক ও ধূমপান বর্জন করুন:
সিগারেট, গুটখা বা যেকোনো ধরনের তামাকজাত দ্রব্য ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় কারণ। ধূমপান ফুসফুস, মুখ, গলা, কিডনি, প্রোস্টেটসহ বহু অঙ্গের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
(খ) স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন:
প্রচুর ফল, শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খান
প্রক্রিয়াজাত ও অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
রেড মিট ও প্যাকেটজাত খাবার নিয়মিত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
(গ) নিয়মিত ব্যায়াম করুন ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
স্থূলতা অনেক ধরনের ক্যান্সারের (যেমন: স্তন, কোলন, জরায়ু) ঝুঁকি বাড়ায়। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
(ঘ) অ্যালকোহল গ্রহণে সীমাবদ্ধতা আনুন:
অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ লিভার, মুখ ও গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে ভালো।
(ঙ) সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সুরক্ষা নিন:
সূর্যের অতিরিক্ত রশ্মিতে ত্বকের ক্যান্সার হতে পারে। তাই রোদে বের হলে ছাতা, সানস্ক্রিন বা সম্পূর্ণ পোশাক ব্যবহার করুন।
(চ) টিকা গ্রহণ করুন:
HPV টিকা: জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে
হেপাটাইটিস বি টিকা: লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধে
(ছ) নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন:
বয়স ও পারিবারিক ইতিহাস অনুযায়ী নিয়মিত চেকআপ, যেমন স্তন, জরায়ু, প্রোস্টেট, কোলন ইত্যাদির স্ক্রিনিং করলে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা সহজ হয়।
(জ) মানসিক চাপ কমান ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন:
দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই মানসিক প্রশান্তি, যোগ ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম বজায় রাখা জরুরি।
উপসংহার:
ক্যান্সার একটি জটিল ও জীবনঘাতী রোগ হলেও সচেতনতা, প্রাথমিক লক্ষণ চেনা, সময়মতো চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে এর ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। “ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিকার” সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা শুধু নিজের জন্যই নয়, বরং পরিবারের প্রতিও এক ধরনের দায়িত্ব পালন। ক্যান্সার মানেই জীবন শেষ নয়—আজকাল চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে বহু মানুষ এই রোগকে জয় করতে সক্ষম হচ্ছেন। তাই আতঙ্ক নয়, সচেতনতাই হোক আমাদের হাতিয়ার।
ক্যান্সার প্রতিরোধের মূলমন্ত্র হল — সচেতনতা, সঠিক জীবনযাপন এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থাতেই ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে প্রতিকার অনেক সহজ হয়ে যায়।
নিজের শরীরকে বুঝে চলুন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে কখনও দেরি করবেন না।
প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলি (FAQs):
১. ক্যান্সার কীভাবে হয়?
ক্যান্সার তখনই হয়, যখন শরীরের কোনো কোষ অস্বাভাবিকভাবে বিভাজিত হতে শুরু করে এবং আশেপাশের টিস্যু ও অঙ্গগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। এটি জিনগত পরিবর্তন, তামাক সেবন, খাদ্যাভ্যাস বা পরিবেশগত কারণে হতে পারে।
২. ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ কী কী?
ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে—অবিচার্য গাঁট বা ফোলা, অকারণে ওজন কমে যাওয়া, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, রক্তপাত, ক্ষত সারতে দেরি হওয়া ইত্যাদি।
৩. ক্যান্সার কি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য?
প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে কিছু ক্যান্সার পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। তবে এটি নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরন, স্টেজ এবং রোগীর শরীরের ওপর।
৪. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কী করা উচিত?
সুস্থ খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান-মদ বর্জন, নিয়মিত ব্যায়াম, টিকা গ্রহণ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে সাহায্য করে।
৫. ক্যান্সার প্রতিরোধে কোন টিকাগুলো গুরুত্বপূর্ণ?
HPV টিকা জরায়ুমুখ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে এবং হেপাটাইটিস বি টিকা লিভার ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
৬. ক্যান্সারের জন্য কোন কোন চিকিৎসা পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়?
সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, হরমোন থেরাপি ও টার্গেটেড থেরাপি বর্তমানে ব্যবহৃত প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতি।
৭. প্রতিদিনের জীবনে কী কী অভ্যাস ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে?
সুস্থ জীবনধারা, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।