ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা ও সেগুলি প্রতিরোধের কার্যকর উপায়: সুস্থ জীবনের পথ
ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা কীভাবে শরীরে প্রভাব ফেলে এবং সেগুলি প্রতিরোধের কার্যকর উপায়, তা জানুন এই গাইডে। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য করণীয় পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন।
🌾 ভূমিকা:
ডায়াবেটিস এখন শুধু একটি রোগ নয়, বরং বিশ্বজুড়ে এক মহামারীর আকার ধারণ করেছে। নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ না হলে ডায়াবেটিস ধীরে ধীরে শরীরে নানা ধরনের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার জন্ম দেয়, যা জীবনের গুণগত মানকে নষ্ট করে দেয় এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। চোখ, কিডনি, স্নায়ু এবং হৃদযন্ত্রের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। তবে আশার কথা হলো—সময়মতো সচেতনতা, সঠিক চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চললে এই জটিলতাগুলো অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই প্রবন্ধে আমরা বিস্তারিত জানবো ডায়াবেটিসের সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা ও সেগুলি প্রতিরোধের কার্যকর উপায় নিয়ে, যাতে তুমি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারো।
আমরা আজকে এই ব্লগে ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো নিম্নরূপ ভাবে –
✅ ১. ডায়াবেটিস ও দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা কী?
✅ ২. ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাগুলো।
✅ ৩. জটিলতাগুলোর লক্ষণ ও ঝুঁকির ইঙ্গিত।
✅ ৪. জটিলতাগুলো প্রতিরোধের কার্যকর উপায়।
✅ ৫. ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ টিপস।
ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা নিচে দেওয়া হলো:
✅ ১. ডায়াবেটিস ও দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা কী?
ডায়াবেটিস হলো এমন একটি দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) রোগ, যেখানে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা তৈরি হওয়া ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করে না। ফলে রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। রক্তে অতিরিক্ত শর্করা দীর্ঘ সময় ধরে থাকলে শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ধীরে ধীরে ক্ষতি হতে থাকে।
যদি ডায়াবেটিস নিয়মিতভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা না যায়, তাহলে এটি ধীরে ধীরে চোখ, কিডনি, স্নায়ু, হৃদযন্ত্র এবং রক্তনালীর উপর গুরুতর প্রভাব ফেলে। এ ধরনের সমস্যাগুলোকেই ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা বলা হয়।
অনেক সময় এসব জটিলতা ধীরে ধীরে তৈরি হয়, প্রথম দিকে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তাই নিয়মিত রক্তে শর্করা পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই জটিলতাগুলো অনেকাংশে প্রতিরোধ বা বিলম্বিত করা সম্ভব।
✅ ২. ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাগুলো:
✅ ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
ডায়াবেটিস যদি নিয়মিত নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে রক্তে শর্করার অতিরিক্ত উপস্থিতি ধীরে ধীরে শরীরের নানা অঙ্গের ক্ষতি করে। এতে নানা ধরনের গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। নিচে ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি প্রধান জটিলতাগুলো তুলে ধরা হলো —
(ক) ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি (চোখের জটিলতা)
উচ্চ রক্তচাপ ও অতিরিক্ত শর্করা চোখের রেটিনার ক্ষতি করে, যার ফলে ঝাপসা দেখা, অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে পারে।
(খ) ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি (কিডনির জটিলতা)
ডায়াবেটিসে কিডনির ছাঁকনির মতো নেফ্রন নষ্ট হয়ে যায়। এতে কিডনি ফেইলিউর পর্যন্ত হতে পারে, এমনকি ডায়ালাইসিস বা ট্রান্সপ্লান্টের প্রয়োজন হতে পারে।
(গ) ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি (স্নায়ুর ক্ষতি)
ডায়াবেটিসে হাত-পা ঝিনঝিন করা, অবশতা, জ্বালাপোড়া বা ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় পায়ের ক্ষতও অনুভব হয় না, যা গুরুতর সংক্রমণ ডেকে আনে।
(ঘ) পায়ের ক্ষত ও পায়ের সংক্রমণ
পায়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ায় পায়ে ক্ষত সেরে উঠতে সময় লাগে। কখনও সংক্রমণ গুরুতর হয়ে পা কেটে ফেলতে পর্যন্ত হতে পারে।
(ঙ) হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি
ডায়াবেটিস হৃদপিণ্ড ও রক্তনালীর উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। এতে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
(চ) চামড়ার সমস্যা ও সংক্রমণ
ডায়াবেটিস রোগীদের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং নানা রকম ফাঙ্গাল ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ দেখা দেয়।
(ছ) যৌন স্বাস্থ্য ও উর্বরতার সমস্যা
পুরুষদের ইরেকটাইল ডিসফাংশন এবং মহিলাদের প্রজনন সমস্যাও ডায়াবেটিসের একটি দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হিসেবে দেখা যায়।
ডায়াবেটিসের এসব জটিলতা ধীরে ধীরে তৈরি হয়। তাই নিয়মিত চেকআপ এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চললে সেগুলি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
✅ ৩. ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাগুলোর লক্ষণ ও ঝুঁকির ইঙ্গিত:
ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে বিকশিত হয় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে স্পষ্ট কোনো লক্ষণ দেখা নাও যেতে পারে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা উপসর্গ প্রকাশ পায়। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ ও ঝুঁকির ইঙ্গিত তুলে ধরা হলো, যেগুলি অবহেলা করা উচিত নয় —
🌾 চোখের জটিলতার লক্ষণ
ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টিশক্তি হ্রাস
চোখে কালো দাগ বা ভাসমান বিন্দু দেখা
রাতের বেলায় ভালো না দেখা
🌾 কিডনির জটিলতার লক্ষণ
হাত-পায়ে ফোলা
প্রসাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
প্রসাবে ফেনা বা রক্ত দেখা
অবসন্নতা বা শ্বাসকষ্ট
🌾 স্নায়ুর জটিলতার লক্ষণ
হাত-পায়ে ঝিনঝিনি বা অবশ অনুভূতি
তীব্র জ্বালা বা ব্যথা
পায়ের ক্ষত দীর্ঘদিন না শুকানো
🌾 হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর জটিলতার লক্ষণ
বুকে ব্যথা বা চাপ
শ্বাস নিতে কষ্ট
অস্বাভাবিকভাবে ঘাম হওয়া
হঠাৎ অবশতা বা কথা বলতে সমস্যা (স্ট্রোকের ইঙ্গিত)
🌾 পায়ের সমস্যার লক্ষণ
পায়ে ক্ষত, যা সহজে শুকায় না
পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া বা রঙ পরিবর্তন
সংক্রমণের গন্ধ বা পুঁজ
⚠️ ঝুঁকির কারণ যেগুলি এসব জটিলতাকে বাড়ায়:
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে না রাখা
উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল
ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন
স্থূলতা ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করা
⛔ এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে বা সন্দেহ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক ব্যবস্থা নিলে জটিলতা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
✅ ৪. ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাগুলো প্রতিরোধের কার্যকর উপায়:
ডায়াবেটিস মানেই জীবন থেমে যাবে — এমন নয়। নিয়মিত রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং সময়মতো চিকিৎসা নিলে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা অনেকাংশে প্রতিরোধ বা বিলম্বিত করা সম্ভব। নিচে কার্যকর কিছু প্রতিরোধমূলক উপায় তুলে ধরা হলো —
🌿 (ক) রক্তে শর্করা নিয়মিত নিয়ন্ত্রণ করা
ডাক্তার যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন, তা মেনে চলা
নিয়মিত গ্লুকোমিটার দিয়ে রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা
ওষুধ বা ইনসুলিন সঠিকভাবে নেওয়া
🌿 (খ) স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যাভ্যাস
শর্করা কম, ফাইবার বেশি এমন খাবার বেছে নেওয়া
বেশি ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা
সবুজ শাকসবজি, ফলমূল ও পূর্ণ শস্য খাবার খাওয়া
🌿 (গ) নিয়মিত ব্যায়াম করা
সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০–৪৫ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করা
ব্যায়াম শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
🌿 (ঘ) ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিস ও জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়
সঠিক ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমানো
🌿 (ঙ) ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ করা
ধূমপান রক্তনালীর ক্ষতি করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়
অ্যালকোহল সেবন সীমিত বা সম্পূর্ণ বন্ধ করা
🌿 (চ) নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা
রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, কিডনি ও চোখ পরীক্ষা
বছরে অন্তত একবার পূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা
🌿 (ছ) পায়ের যত্ন নেওয়া
প্রতিদিন পা পরিষ্কার ও শুকনো রাখা
পায়ে আঘাত বা ক্ষত হলে দ্রুত চিকিৎসা করা
সঠিক মাপের জুতো ব্যবহার করা
🌿 (জ) মানসিক চাপ কমানো ও ঘুমের যত্ন
পর্যাপ্ত ঘুম
মেডিটেশন, যোগা বা রিলাক্সেশন টেকনিক অনুশীলন করা
🌟 মনে রাখো: নিয়মিত রুটিন, সচেতনতা ও ডাক্তারকে সাথে নিয়ে চললে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো সম্ভব এবং সুস্থভাবে জীবন উপভোগ করা যায়।
✅ ৫. ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ টিপস:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা প্রতিরোধে শুধু ওষুধ আর ডায়েট নয় — কিছু দৈনন্দিন অভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর টিপস দেওয়া হলো —
🌾 ১️⃣ প্রতিদিন একটি রুটিন মেনে চলুন
খাবার, ওষুধ, ব্যায়াম ও ঘুমের নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন।
রুটিনে পরিবর্তন হলে আগে থেকেই পরিকল্পনা করুন।
🌾 ২️⃣ খাবার খাওয়ার সময় সচেতন থাকুন
অল্প অল্প করে বারবার খেতে চেষ্টা করুন।
বাইরের ফাস্টফুড, মিষ্টি ও অতিরিক্ত লবণ/তেল এড়িয়ে চলুন।
🌾 ৩️⃣ পর্যাপ্ত পানি পান করুন
শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে প্রচুর পানি পান করুন।
মিষ্টি পানীয় ও সফট ড্রিঙ্ক বর্জন করুন।
🌾 ৪️⃣ পায়ের যত্নে অবহেলা করবেন না
পা প্রতিদিন ভালোভাবে পরীক্ষা করুন।
ফোসকা, কাটা বা ক্ষত হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন।
কখনও খালি পায়ে হাঁটবেন না।
🌾 ৫️⃣ রোগ ও জটিলতা সম্পর্কে জানুন
নিজে এবং পরিবারের সবাইকে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন করুন।
যে লক্ষণগুলো গুরুতর হতে পারে তা জেনে রাখুন।
🌾 ৬️⃣ চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন
ওষুধ বা ইনসুলিনের ডোজ পরিবর্তনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
রিপোর্ট বা পরীক্ষা নিয়ে দ্বিধা থাকলে জিজ্ঞাসা করুন।
🌾 ৭️⃣ ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখুন
মানসিক চাপ ডায়াবেটিসকে বাড়িয়ে দেয়। তাই মানসিকভাবে শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।
নিজের উপর আস্থা রাখুন — নিয়মিত চর্চায় আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন।
🌸 মনে রাখুন: ছোট ছোট ভালো অভ্যাসই বড় পরিবর্তন আনে। নিয়মিত নিজের যত্ন নিন, সতর্ক থাকুন আর স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন। ডায়াবেটিস আপনাকে থামাতে পারবে না।
✅ ৬. উপসংহার:
ডায়াবেটিস একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। নিয়মিত রক্তে শর্করা পর্যবেক্ষণ, সঠিক ওষুধ বা ইনসুলিন ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে এর দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাগুলো অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। জটিলতাগুলো প্রথমে চোখে না পড়লেও ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে গুরুতর ক্ষতি করতে পারে, তাই সময়মতো সতর্ক হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য নিজের প্রতি যত্নশীল হোন, রুটিন মেনে চলুন এবং পরিবারের সহযোগিতা নিন। মনে রাখবেন—ডায়াবেটিস আপনাকে আটকাবে না, যদি আপনি সচেতন থাকেন এবং নিয়মিত চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলেন। স্বাস্থ্যই সম্পদ, তাই নিজের শরীরের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে এক স্বাস্থ্যকর ও আনন্দময় জীবন বেছে নিন।
🌿 সতর্ক থাকুন, নিয়ম মানুন, সুস্থ থাকুন।
🌾 ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা: ৩০টি FAQ:
১. ডায়াবেটিস কী ধরনের রোগ?
ডায়াবেটিস হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যেখানে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে।
২. ডায়াবেটিসে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা কী বোঝায়?
রক্তে শর্করার মাত্রা দীর্ঘদিন বেশি থাকলে যে ধীরে ধীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাকেই দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা বলে।
৩. ডায়াবেটিস কি চোখের ক্ষতি করে?
হ্যাঁ, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি চোখের ক্ষতি করে এবং অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে পারে।
৪. ডায়াবেটিস কিডনির সমস্যা তৈরি করে কেন?
উচ্চ শর্করা কিডনির ছাঁকনির ক্ষতি করে, ফলে কিডনি কাজ করা বন্ধ করতে পারে।
৫. ডায়াবেটিস স্নায়ুর ক্ষতি করে কেন?
রক্তে শর্করার অতিরিক্ত উপস্থিতি স্নায়ু কোষের ক্ষতি করে, যাকে নিউরোপ্যাথি বলা হয়।
৬. ডায়াবেটিস কি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়?
হ্যাঁ, এটি হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীতে ক্ষতি করে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
৭. ডায়াবেটিসে পা-তে কেন সমস্যা হয়?
স্নায়ুর ক্ষতি ও রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ায় পায়ে ক্ষত ও সংক্রমণ হয়।
৮. ডায়াবেটিসের জটিলতা শুরু হওয়ার লক্ষণ কী?
দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, পায়ে অসাড়তা, প্রসাবে ফেনা, বুকে ব্যথা ইত্যাদি।
৯. জটিলতা কবে থেকে শুরু হয়?
সাধারণত কয়েক বছর নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিসের পর ধীরে ধীরে শুরু হয়।
১০. কোনো পরীক্ষা দিয়ে জটিলতা ধরা যায়?
হ্যাঁ, চোখের ফান্ডাস পরীক্ষা, কিডনি ফাংশন টেস্ট, নার্ভ কন্ডাকশন টেস্ট ইত্যাদি করা হয়।
১১. ডায়াবেটিসের জটিলতা কি প্রতিরোধ করা সম্ভব?
হ্যাঁ, নিয়মিত শর্করা নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
১২. খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিত?
কম শর্করা, বেশি ফাইবার, শাকসবজি ও পূর্ণ শস্য সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
১৩. কতদিন পর পর চেকআপ করবো?
ডায়াবেটিস রোগীদের বছরে অন্তত একবার পূর্ণ চেকআপ করা উচিত।
১৪. রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ কি জরুরি?
হ্যাঁ, কারণ এগুলোও জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়।
১৫. ধূমপান ও অ্যালকোহল কতটা ক্ষতিকর?
এগুলো রক্তনালী ও স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত করে জটিলতা বাড়ায়।
১৬. ডায়াবেটিসে ব্যায়াম কেন দরকার?
ব্যায়াম রক্তে শর্করা ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
১৭. ওজন বেশি থাকলে ঝুঁকি বেশি কি?
হ্যাঁ, স্থূলতা জটিলতার সম্ভাবনা বাড়ায়।
১৮. পায়ের যত্ন কিভাবে নেব?
পা প্রতিদিন পরিষ্কার ও শুকনো রাখা, আঘাত এড়ানো এবং আরামদায়ক জুতো পরা।
১৯. মানসিক চাপ কি ডায়াবেটিস বাড়ায়?
হ্যাঁ, মানসিক চাপ শর্করা নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটায়।
২০. পর্যাপ্ত ঘুম কি জরুরি?
অবশ্যই, কম ঘুম বা খারাপ ঘুম শর্করা বাড়ায়।
২১. শুধু ডায়েটেই কি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব?
হালকা ডায়াবেটিসে কিছু ক্ষেত্রে সম্ভব, তবে প্রয়োজনে ওষুধ বা ইনসুলিন দরকার হয়।
২২. ইনসুলিন কি জটিলতা কমায়?
ইনসুলিন শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা জটিলতা প্রতিরোধ করে।
২৩. ওষুধ বন্ধ করা কি ঠিক?
না, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনো ওষুধ বন্ধ করবেন না।
২৪. বিকল্প চিকিৎসা কি নিরাপদ?
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো বিকল্প চিকিৎসা শুরু করবেন না।
২৫. পরিবারের অন্যদেরও কি পরীক্ষা করা উচিত?
হ্যাঁ, কারণ ডায়াবেটিসের পারিবারিক ঝুঁকি থাকে।
২৬. বছরে কয়বার চোখ পরীক্ষা করবো?
কমপক্ষে একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দেখানো উচিত।
২৭. কিডনি রক্ষা করতে কী করবো?
রক্তচাপ ও শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা, প্রচুর পানি পান করা।
২৮. হাত-পায়ে ঝিনঝিনি হলে কী করবো?
ডাক্তারকে জানিয়ে স্নায়ুর পরীক্ষা করান।
২৯. কতক্ষণে হাঁটাহাঁটি করা উচিত?
প্রতিদিন অন্তত ৩০–৪৫ মিনিট হালকা হাঁটা বা ব্যায়াম করুন।
৩০. ডায়াবেটিস কি সারা জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে?
হ্যাঁ, এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। নিয়মিত নিয়ন্ত্রণই সুস্থতার চাবিকাঠি।