থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ড (Goiter): কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার
থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ড (Goiter) কেন হয়? এর লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। সঠিক চিকিৎসা ও প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
ভূমিকা:
থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ড (Goiter) হলো একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা মূলত গলার সামনের অংশে থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়ার ফলে দেখা দেয়। এটি যেকোনো বয়সের মানুষের মধ্যে হতে পারে, তবে মহিলাদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি। সাধারণত আয়োডিনের ঘাটতি, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক কার্যকলাপের কারণে গলগন্ডের সৃষ্টি হয়। এই সমস্যাটি শুধু শারীরিক অস্বস্তি নয়, বরং কখনও কখনও শ্বাসকষ্ট বা গিলতে অসুবিধার কারণও হয়ে দাঁড়ায়। সঠিক সময়ে এর কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নিবন্ধে আমরা গলগন্ডের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
তথ্যসূত্র জানতে এখানে ক্লিক করুন
থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ডের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ সমূহ:
থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ড (Goiter) মূলত থাইরয়েড গ্রন্থির আকার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ঘটে। এর ফলে গলার সামনের অংশে একটি ফোলা বা স্ফীত অবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ডের লক্ষণ ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। নিচে থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ডের কিছু সাধারণ লক্ষণ তুলে ধরা হলো:
(ক) গলার সামনের অংশে ফোলা বা স্ফীত অবস্থা:
এটি থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ডের প্রধান লক্ষণ, যা চোখে পড়ার মতো স্পষ্ট হয়ে থাকে।
(খ) গলায় চাপ বা ভারী অনুভূতি:
গলার অংশে অস্বস্তি বা চাপ অনুভব করা।
(গ) গিলতে বা শ্বাস নিতে অসুবিধা:
গ্রন্থির আকার বৃদ্ধি পেলে শ্বাসনালী বা খাদ্যনালীতে চাপ পড়ে।
(ঘ) গলার স্বর পরিবর্তন:
কণ্ঠস্বরে কর্কশতা বা পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
(ঙ) কাশি বা শুষ্ক কাশি:
বিশেষ করে যখন গ্রন্থি শ্বাসনালীতে চাপ দেয়।
(চ) গলায় ব্যথা বা অস্বস্তি:
ফোলা বা স্ফীত অংশে হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
(ছ) হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজমের লক্ষণ:
হাইপোথাইরয়েডিজম:
ক্লান্তি, ত্বক শুষ্ক হওয়া, ওজন বৃদ্ধি।
হাইপারথাইরয়েডিজম:
ওজন হ্রাস, ঘাম বেশি হওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনোটি দেখা দেয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক চিকিৎসা এবং সময়মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা গলগন্ড প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ডের উল্লেখযোগ্য কারণ সমূহ:
গলগন্ড (Goiter) মূলত থাইরয়েড গ্রন্থির আকার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে হয়। এই বৃদ্ধির পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। নিচে গলগন্ডের প্রধান কারণগুলো তুলে ধরা হলো:
(ক) আয়োডিনের ঘাটতি:
আয়োডিন থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আয়োডিনের ঘাটতি হলে থাইরয়েড গ্রন্থি আকারে বড় হয়ে যায়। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকা এবং আয়োডিনবিহীন খাবার গ্রহণ করলে গলগন্ডের ঝুঁকি বাড়ে।
World Health Organization (WHO) – Iodine Deficiency Disorders:
(খ) অটোইমিউন রোগ:
হাশিমোটোস থাইরয়ডাইটিস:
এটি হাইপোথাইরয়েডিজমের একটি কারণ, যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাইরয়েড গ্রন্থিকে ক্ষতি করে।
গ্রেভস ডিজিজ:
এটি হাইপারথাইরয়েডিজমের একটি কারণ, যেখানে থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত হরমোন উৎপাদন করে।
(গ) হরমোনের ভারসাম্যহীনতা:
থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH) বৃদ্ধির ফলে থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যেতে পারে।
(ঘ) থাইরয়েড নোডিউলস (Thyroid Nodules):
থাইরয়েড গ্রন্থিতে ছোট ছোট গুটি বা নোডিউল গঠিত হলে গলগন্ড দেখা দিতে পারে।
(ঙ) গর্ভাবস্থা এবং মেনোপজ:
মহিলাদের গর্ভাবস্থা বা মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে থাইরয়েডের আকার বৃদ্ধি পেতে পারে।
(চ) থাইরয়েড ক্যান্সার:
থাইরয়েড গ্রন্থির কোষে ক্যান্সার হলে গ্রন্থি বড় হয়ে যেতে পারে।
(ছ) ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
লিথিয়াম বা অ্যামিওডারোন জাতীয় কিছু ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে থাইরয়েডে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
(জ) জেনেটিক বা বংশগত কারণ:
যদি পরিবারে আগে থেকেই গলগন্ডের ইতিহাস থাকে, তবে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
(ঝ) প্রদাহ বা ইনফেকশন:
থাইরয়েড গ্রন্থিতে প্রদাহ বা সংক্রমণ (থাইরয়ডাইটিস) থাকলে গ্রন্থি বড় হতে পারে।
যদিও গলগন্ডের কারণ ভিন্ন হতে পারে, তবে সঠিক নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপযুক্ত চিকিৎসকের পরামর্শে হরমোনের পরীক্ষা এবং আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে সঠিক কারণ নির্ণয় করা সম্ভব।
থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ডের প্রতিকার ও চিকিৎসা পরামর্শ:
গলগন্ড (Goiter) প্রতিকারের উপায় নির্ভর করে এর কারণ এবং লক্ষণের উপর। গলগন্ড যদি আকারে ছোট এবং উপসর্গহীন হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত পর্যবেক্ষণই যথেষ্ট হতে পারে। তবে জটিল অবস্থায় বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। নিচে গলগন্ড প্রতিকারের বিভিন্ন উপায় তুলে ধরা হলো:
১. ঘরোয়া প্রতিকার:
আয়োডিনযুক্ত খাবার গ্রহণ:
আয়োডিনের ঘাটতি গলগন্ডের মূল কারণ হলে, আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন আয়োডিনযুক্ত লবণ, সামুদ্রিক মাছ, ডিম এবং দুগ্ধজাত পণ্য খাওয়া উপকারী।
আয়ুর্বেদিক ওষুধ:
শুদ্ধ গুগ্গুলু এবং কাঁচা হলুদ গলগন্ডের উপশমে সহায়ক হতে পারে।
থাইমের চা:
থাইম গাছের পাতা দিয়ে তৈরি চা থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
গলার ব্যায়াম:
গলায় রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে ঘাড়ের হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।
২. ওষুধ দ্বারা প্রতিকার:
থাইরয়েড হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি:
হাইপোথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে চিকিৎসক লেভোথাইরোক্সিন বা অন্য থাইরয়েড হরমোন নির্ধারণ করতে পারেন।
বিরোধী থাইরয়েড ওষুধ:
হাইপারথাইরয়েডিজমের জন্য মেথিমাজোল বা প্রোপাইলথাইউরাসিল ব্যবহার করা হয়।
আয়োডিন সাপ্লিমেন্ট:
আয়োডিন ঘাটতির জন্য আয়োডিন ট্যাবলেট বা আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করা যেতে পারে।
রেডিওএকটিভ আয়োডিন থেরাপি:
থাইরয়েড গ্রন্থি সংকুচিত করতে রেডিওএকটিভ আয়োডিন ব্যবহার করা হয়।
৩. সার্জারি (থাইরয়েডেকটমি):
যদি গলগন্ড বড় হয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস বা গিলতে অসুবিধা করে, তবে গ্রন্থির কিছু অংশ বা সম্পূর্ণ অংশ অপসারণের জন্য সার্জারি করা হতে পারে।
ক্যান্সারের কারণে গলগন্ড হলে পুরো থাইরয়েড গ্রন্থি অপসারণ করা প্রয়োজন হতে পারে।
৪. জীবনযাপন পরিবর্তন:
স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ:
মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। তাই মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করতে পারেন।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
সবুজ শাকসবজি, ফলমূল এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম:
শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ:
গলগন্ডের লক্ষণ বা অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দ্রুত এন্ডোক্রাইনোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
নিয়মিত থাইরয়েড প্রোফাইল পরীক্ষা করিয়ে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
আমেরিকান থাইরয়েড অ্যাসোসিয়েশন (ATA) গলগন্ডের চিকিৎসা নির্দেশিকা এবং স্বাস্থ্য টিপস
সতর্কতা:
গলগন্ডের আকার বা উপসর্গ হালকা হলেও অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করলে জটিলতা কম হয়। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে গলগন্ড পুরোপুরি সেরে উঠতে পারে।
উপসংহার:
থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ড (Goiter) একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সময়মতো চিকিৎসা না করলে জটিলতায় পরিণত হতে পারে। আয়োডিনের ঘাটতি, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা অটোইমিউন রোগের কারণে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। গলার সামনের অংশে ফোলা বা স্ফীত হওয়া, গিলতে বা শ্বাস নিতে কষ্ট, কণ্ঠস্বরে পরিবর্তনসহ বিভিন্ন লক্ষণ গলগন্ডের উপস্থিতি নির্দেশ করে।
গলগন্ড প্রতিরোধের জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং আয়োডিনযুক্ত খাবার গ্রহণ। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চল বা আয়োডিন স্বল্পতাযুক্ত অঞ্চলে বসবাসকারীদের এই বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। গর্ভবতী মহিলা এবং মেনোপজ-পরবর্তী মহিলাদের জন্যও আয়োডিনের প্রয়োজনীয়তা বেশি।
গলগন্ডের চিকিৎসা মূলত কারণের উপর নির্ভর করে। আয়োডিন ঘাটতির ক্ষেত্রে আয়োডিনযুক্ত লবণ ও সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার উপকারী। যদি হরমোনের ভারসাম্যহীনতা থাকে, তবে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা বিরোধী থাইরয়েড ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে সার্জারি বা রেডিওএকটিভ আয়োডিন থেরাপি করানো হয়।
তবে গলগন্ড প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত থাইরয়েড পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি। জীবনযাপন পরিবর্তন, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এই সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।
অতএব, গলগন্ড হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক ব্যবস্থাপনা গলগন্ড থেকে মুক্তি দিতে পারে এবং ভবিষ্যতে জটিলতা এড়াতে সহায়তা করে। সচেতন থাকুন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে (WHO), ভারতের এবং বিশ্বের অবস্থা নির্নয় করা হলো:
থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ড (Goiter) মূলত আয়োডিনের ঘাটতির কারণে সৃষ্ট একটি স্বাস্থ্য সমস্যা, যা বিশ্বব্যাপী এবং ভারতে এখনও জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং বিভিন্ন গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, গলগন্ডের বর্তমান অবস্থা নিম্নরূপ:
🌍 বিশ্বব্যাপী গলগন্ডের অবস্থা:
আয়োডিনের ঘাটতির কারণে গলগন্ড বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের প্রায় ২.২ বিলিয়ন মানুষ আয়োডিনের ঘাটতির ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে স্কুল-স্নাতক বয়সী শিশুদের মধ্যে গলগন্ডের প্রাদুর্ভাব প্রায় ১৫.৮%।
🇮🇳 ভারতে গলগন্ডের অবস্থা:
ভারতে গলগন্ড এবং অন্যান্য আয়োডিন ঘাটতি রোগ (IDD) এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতের কোনো রাজ্যই IDD থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নয়।
গোয়ালিয়র জেলার একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৬-১২ বছর বয়সী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের মধ্যে গলগন্ডের মোট হার ৪.৮৩%।
ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে (NFHS-IV, ২০১৫-১৬) অনুযায়ী, ভারতে স্ব-প্রতিবেদনকৃত গলগন্ড বা থাইরয়েড সমস্যার প্রাদুর্ভাব ছিল ২.২%।
✅ প্রতিকার ও উদ্যোগ:
ভারত সরকার ১৯৮৬ সালে সমস্ত ভোজ্য লবণ আয়োডিনযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়, যার ফলে গলগন্ডের প্রাদুর্ভাবে উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা গেছে।
বর্তমানে, ভারতের অধিকাংশ এলাকায় আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করা হয়, তবে কিছু অঞ্চলে এখনও আয়োডিনের ঘাটতি বিদ্যমান।
🧠 উপসংহার:
গলগন্ড এবং আয়োডিন ঘাটতি এখনও বিশ্বব্যাপী এবং ভারতে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিদ্যমান। যথাযথ সচেতনতা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, এবং আয়োডিনযুক্ত লবণের ব্যবহার এই সমস্যার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ড (Goiter) সম্পর্কিত ৩০টি FAQ:
১. থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ড (Goiter) কী?
গলগন্ড হলো থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, যা গলার সামনের অংশে ফোলা বা স্ফীত আকারে দেখা দেয়।
২. থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ড কেন হয়?
গলগন্ড সাধারণত আয়োডিনের ঘাটতি, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, অটোইমিউন রোগ বা থাইরয়েড ক্যান্সারের কারণে হয়।
৩. থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ড কি ক্যান্সারজনিত?
সব গলগন্ড ক্যান্সারজনিত নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে থাইরয়েড ক্যান্সার গলগন্ডের কারণ হতে পারে।
৪. থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ডের প্রধান লক্ষণ কী?
গলার সামনের অংশে ফোলা, গিলতে বা শ্বাস নিতে কষ্ট, কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন, গলায় চাপ বা ব্যথা।
৫. গলগন্ড কি শুধুমাত্র মহিলাদের হয়?
না, গলগন্ড পুরুষ ও মহিলাদের উভয়ের মধ্যেই হতে পারে, তবে মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
৬. আয়োডিনের অভাবে গলগন্ড কেন হয়?
আয়োডিন থাইরয়েড হরমোন তৈরির জন্য জরুরি। এর অভাবে থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যায়।
৭. গলগন্ড কি বংশগত হতে পারে?
হ্যাঁ, পরিবারে যদি থাইরয়েড সমস্যার ইতিহাস থাকে, তবে গলগন্ড হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
৮. গর্ভাবস্থায় গলগন্ড হওয়ার ঝুঁকি কি বেশি?
হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে গলগন্ডের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
৯. গলগন্ড কি বিপজ্জনক?
গলগন্ড সবসময় বিপজ্জনক নয়, তবে শ্বাস বা গিলতে সমস্যা হলে তা গুরুতর হতে পারে।
১০. গলগন্ড কি নিজে থেকেই সেরে যায়?
আকারে ছোট গলগন্ড নিজে থেকেই কমে যেতে পারে, তবে বড় বা জটিল গলগন্ড চিকিৎসার প্রয়োজন।
১১. গলগন্ডের জন্য কোন ডাক্তার দেখানো উচিত?
এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট বা থাইরয়েড বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
১২. গলগন্ড নির্ণয়ে কোন পরীক্ষা করা হয়?
থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট (T3, T4, TSH), আলট্রাসাউন্ড এবং কখনও বায়োপসি।
১৩. গলগন্ডের ঘরোয়া প্রতিকার কী?
আয়োডিনযুক্ত লবণ, থাইমের চা, কাঁচা হলুদ এবং গলার ব্যায়াম উপকারী।
১৪. থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ড কি ব্যথাযুক্ত হয়?
সব গলগন্ড ব্যথাযুক্ত নয়, তবে প্রদাহ বা সংক্রমণের কারণে ব্যথা হতে পারে।
১৫. থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ড কি হরমোনের সমস্যার লক্ষণ?
হ্যাঁ, হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণে গলগন্ড হতে পারে।
১৬. গলগন্ডের সার্জারি কখন প্রয়োজন?
যদি গলগন্ড বড় হয়, শ্বাসকষ্ট করে বা ক্যান্সারের সন্দেহ থাকে, তবে সার্জারি প্রয়োজন।
১৭. গলগন্ডে কি খাবার এড়ানো উচিত?
গলগন্ডে সয়াবিন, বাঁধাকপি, ব্রোকলি এবং ফুলকপি এড়ানো উচিত, কারণ এগুলো হরমোনে প্রভাব ফেলে।
১৮. থাইরয়েড হরমোন ওষুধ কি গলগন্ড কমায়?
হ্যাঁ, হাইপোথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে লেভোথাইরোক্সিন গ্রহণ করলে গলগন্ড কমতে পারে।
১৯. গলগন্ড প্রতিরোধে কী করা যায়?
আয়োডিনযুক্ত খাবার খাওয়া, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি।
২০. রেডিওএকটিভ আয়োডিন থেরাপি কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, এটি সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করলে নিরাপদ এবং কার্যকর।
২১. গলগন্ড কি পুনরায় হতে পারে?
হ্যাঁ, সঠিকভাবে চিকিৎসা না হলে বা কারণ ঠিক না হলে পুনরায় হতে পারে।
২২. গলগন্ড কি শিশুরাও পেতে পারে?
হ্যাঁ, আয়োডিনের অভাবে বা জেনেটিক কারণে শিশুরাও আক্রান্ত হতে পারে।
২৩. গলগন্ডে কি ব্যায়াম উপকারী?
হ্যাঁ, গলার ব্যায়াম এবং যোগব্যায়াম গলার পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে।
২৪. গলগন্ডের আকার কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?
আলট্রাসাউন্ড বা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে গ্রন্থির আকার নির্ধারণ করা হয়।
২৫. গলগন্ডে কি হরমোন থেরাপি নিরাপদ?
চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা হলে হরমোন থেরাপি নিরাপদ।
২৬. গলগন্ড কি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়?
বড় আকারের গলগন্ড শ্বাসনালীতে চাপ সৃষ্টি করলে ঘুমে সমস্যা হতে পারে।
২৭. গলগন্ড কি সবসময় দৃশ্যমান হয়?
না, ছোট গলগন্ড অনেক সময় চোখে পড়ে না।
২৮. থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ডের সঙ্গে কি ওজন বাড়ে?
হ্যাঁ, হাইপোথাইরয়েডিজম থাকলে ওজন বাড়তে পারে।
২৯. থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ড কি ডায়াবেটিসের সাথে সম্পর্কিত?
না, তবে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা উভয় অবস্থার জন্যই দায়ী হতে পারে।
৩০. থাইরয়েড গ্রন্থির গলগন্ড কি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য?
কারণ অনুযায়ী নিরাময়ের সম্ভাবনা ভিন্ন। আয়োডিন ঘাটতির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব, তবে জটিল ক্ষেত্রে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।
বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।