You are currently viewing ফুসফুস ক্যান্সার: ধূমপান ছাড়াও যেসব কারণে ঝুঁকি বাড়ে, সতর্কতা খুব জরুরী, ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ

ফুসফুস ক্যান্সার: ধূমপান ছাড়াও যেসব কারণে ঝুঁকি বাড়ে, সতর্কতা খুব জরুরী, ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ

ফুসফুস ক্যান্সার: ধূমপান ছাড়াও যেসব কারণে ঝুঁকি বাড়ে, সতর্কতা খুব জরুরী

ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ শুধু ধূমপান নয়—প্যাসিভ স্মোকিং, বায়ু দূষণ, রাডন গ্যাস ও অন্যান্য ঝুঁকিও ভূমিকা রাখে। বিস্তারিত জানতে এখনই পড়ুন এই সচেতনতামূলক গাইড।

ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ :

ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ শুধু ধূমপান নয়—দূষিত বাতাস, রাডন গ্যাস ও রাসায়নিক পদার্থও হতে পারে বড় কারণ। প্রতিরোধে জানুন গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা।

ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ শুধুমাত্র ধূমপানের কারণেই হয় তা নয়। এছাড়া বায়ু দূষণ, প্যাসিভ স্মোকিং, পারিবারিক ইতিহাসসহ আরও নানা কারণেও বাড়ে ঝুঁকি। জেনে নাও সতর্ক থাকার উপায়।

ভূমিকা:

ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ ভাবতে গেলে বা শুনলেই আমাদের মনে প্রথমে আসে ধূমপানের কথা। নিঃসন্দেহে ধূমপান এই রোগের প্রধান কারণ, তবে এটা একমাত্র কারণ নয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, অনেক মানুষ ধূমপান না করেও ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর পেছনে রয়েছে আরও কিছু গোপন ও অবহেলিত ঝুঁকি—যেমন বায়ু দূষণ, প্যাসিভ স্মোকিং, রেডিয়েশন, পারিবারিক ইতিহাস এবং কিছু রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ।

এই লেখায় আমরা বিস্তারিতভাবে জানব ধূমপান ছাড়াও ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি কীভাবে বাড়ে এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য কী কী সতর্কতা নেওয়া জরুরি।

ফুসফুস ক্যান্সার কী?

ফুসফুস ক্যান্সার হল এমন একটি রোগ যেখানে ফুসফুসের কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় ও ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের ফুসফুস দুটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যেগুলো শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড বের করে দেয়। কিন্তু যখন এই কোষগুলোর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায় ও অপ্রাকৃতভাবে বিভাজিত হতে থাকে, তখন তা টিউমারে পরিণত হয় এবং ধীরে ধীরে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।

ফুসফুস ক্যান্সার মূলত দুই ধরনের হয়—নন-স্মল সেল লাং ক্যান্সার (NSCLC) ও স্মল সেল লাং ক্যান্সার (SCLC)। NSCLC সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং এটি তুলনামূলকভাবে ধীরে বাড়ে। অপরদিকে, SCLC অনেক দ্রুত শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং চিকিৎসা আরও জটিল হয়ে ওঠে।

এই রোগটি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, কিন্তু সমস্যা হল—এর বেশিরভাগ লক্ষণ সাধারণ শ্বাসপ্রশ্বাসের অসুখের মতো হওয়ায় শুরুতে কেউ গুরুত্ব দেয় না। ফলে অনেক সময় দেরিতে ধরা পড়ে এবং তখন ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বর্তমানে ধূমপান, বায়ু দূষণ, রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ, এবং পারিবারিক ইতিহাস ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ফুসফুস ক্যান্সার কতটা বিপজ্জনক?

ফুসফুস ক্যান্সারকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ও প্রাণঘাতী ক্যান্সারের মধ্যে অন্যতম হিসেবে ধরা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে ফুসফুস ক্যান্সারের কারণে। এর মূল কারণ হল—এই রোগটি সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে খুব সহজে ধরা পড়ে না এবং লক্ষণগুলি অনেক সময় সাধারণ ফুসফুসের রোগের সঙ্গে মিলে যায়। ফলে রোগীরা চিকিৎসা নিতে দেরি করে ফেলেন।

এই ক্যান্সার খুব দ্রুত ফুসফুসের বাইরের অংশে যেমন—হৃৎপিণ্ড, হাড়, লিভার কিংবা মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে। একে বলে Metastasis, যা রোগটিকে আরও জটিল করে তোলে এবং চিকিৎসা কঠিন হয়ে ওঠে। এছাড়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে এটি শরীরকে দুর্বল করে ফেলে এবং সাধারণ সংক্রমণেও মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যায়।

যত দেরিতে ধরা পড়ে, তত কমে যায় বাঁচার সম্ভাবনা। প্রাথমিক স্তরে যদি ফুসফুস ক্যান্সার ধরা পড়ে ও চিকিৎসা শুরু হয়, তাহলে রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা থাকে প্রায় ৫০-৬০%। কিন্তু যদি এটি দেরিতে ধরা পড়ে বা শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেই হার নেমে আসে মাত্র ৫-১০ শতাংশে।

তাই সচেতনতা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস ত্যাগ করাই ফুসফুস ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রধান উপায়

ফুসফুস ক্যান্সারের প্রকারভেদ:

ফুসফুস ক্যান্সার মূলত দুটি প্রধান প্রকারে ভাগ করা হয়: নন-স্মল সেল লাং ক্যান্সার (Non-Small Cell Lung Cancer – NSCLC) এবং স্মল সেল লাং ক্যান্সার (Small Cell Lung Cancer – SCLC)। এই দুই প্রকারের ক্যান্সারের গঠন, বিস্তারের গতি, চিকিৎসার পদ্ধতি এবং প্রভাব—সবই আলাদা।

১. নন-স্মল সেল লাং ক্যান্সার (NSCLC)

এটি ফুসফুস ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ প্রকার, প্রায় ৮৫% কেস NSCLC হয়ে থাকে। NSCLC-কে আবার কয়েকটি সাবটাইপে ভাগ করা যায়:

অ্যাডেনোকার্সিনোমা (Adenocarcinoma): এটি NSCLC-এর সবচেয়ে সাধারণ ফর্ম, যা সাধারণত ধূমপায়ী এবং অ-ধূমপায়ী উভয়ের মধ্যেই দেখা যায়। এটি সাধারণত ফুসফুসের বাইরের দিকে শুরু হয় এবং ধীরে বাড়ে।

স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা (Squamous Cell Carcinoma): এটি সাধারণত ধূমপায়ীদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং ফুসফুসের মধ্যবর্তী অঞ্চলে শুরু হয়।

লার্জ সেল কার্সিনোমা (Large Cell Carcinoma): এটি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেশি থাকে।

২. স্মল সেল লাং ক্যান্সার (SCLC)

এই প্রকারটি তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়, কিন্তু এটি খুব দ্রুত শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। SCLC সাধারণত ভারী ধূমপায়ীদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং চিকিৎসা চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে কারণ এটি সাধারণত যখন ধরা পড়ে, তখন তা অনেক দূর ছড়িয়ে পড়ে থাকে। এই ক্যান্সার সাধারণত কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়, তবে রোগীর সুস্থতার সম্ভাবনা তুলনামূলক কম থাকে।

ধূমপান ছাড়াও ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি যেসব কারণে বাড়ে

ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ সমূহ:

১. প্যাসিভ স্মোকিং (Secondhand Smoke)

প্যাসিভ স্মোকিং একটি, ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। তুমি নিজে ধূমপান না করলেও যদি এমন পরিবেশে থাকো যেখানে অন্য কেউ ধূমপান করে, তাহলে তার ধোঁয়া নিঃশ্বাসের মাধ্যমে তোমার ফুসফুসে ঢুকছে। একে বলে প্যাসিভ স্মোকিং, যা ফুসফুস ক্যান্সারের বড় কারণ।

২. বায়ু দূষণ (Air Pollution):

বায়ু দূষণও ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে গাড়ির ধোঁয়া, কলকারখানার গ্যাস, এবং ধূলিকণা ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বায়ু দূষণও ধীরে ধীরে ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

৩. রাডন গ্যাস (Radon Exposure):

রাডন একটি বর্ণহীন, গন্ধহীন প্রাকৃতিক গ্যাস যা মাটি ও পাথর থেকে নির্গত হয়। এই গ্যাস বাড়ির মেঝে বা বেসমেন্টে জমে যেতে পারে এবং দীর্ঘ সময় শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে ক্যান্সার তৈরি করতে পারে।

৪. আসবেস্টস ও রাসায়নিক পদার্থ:

আসবেস্টস (asbestos), আর্সেনিক, ইউরেনিয়াম, কার্বন মনোঅক্সাইড, এবং নির্দিষ্ট কীটনাশকের সংস্পর্শে এলে ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এসব পদার্থ শিল্প কারখানা বা নির্মাণস্থলে বেশি দেখা যায়।

৫. পারিবারিক ইতিহাস:

তোমার পরিবারে যদি কেউ ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে জেনেটিক কারণেও তোমার ঝুঁকি থাকতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত চেকআপ করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

৬. ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী রোগ:

ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, COPD বা অ্যাজমার মতো ফুসফুসের পুরনো রোগ থাকলে ক্যান্সারে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

৭. আনহেলদি জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস:

পর্যাপ্ত ফলমূল-শাকসবজি না খাওয়া, শরীরচর্চার অভাব, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া ফুসফুসসহ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়।

৮. রেডিয়েশন এক্সপোজার –

ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ হিসেবে রেডিয়েশন এক্সপোজার কেও ধরা হয় কারণ রেডিয়েশন এক্সপোজার চিকিৎসার জন্য নেওয়া রেডিয়েশন থেরাপি ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৯. কারখানার রাসায়নিক পদার্থে কাজ করা – যেমন আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, নিকেল ইত্যাদি।

ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে যেসব সতর্কতা জরুরি:

১. ধূমপান এবং প্যাসিভ স্মোকিং পুরোপুরি এড়িয়ে চলুন-

নিজে কখনও ধূমপান করেন না এবং যেসব জায়গায় ধূমপান হয়, সেইসব জায়গা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। ধূমপায়ী বন্ধুবান্ধবদেরও এই ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করুন। না হলে নিজে ধুমপান না করেও ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ হয়ে যেতে পারেন। তাই সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি।

২. ঘরের বায়ু পরিষ্কার রাখুন –

রাডন গ্যাস শনাক্ত করতে বাড়ির বেসমেন্ট বা নিচতলায় রাডন টেস্ট করান। বাড়ির জানালা-দরজা খোলা রাখুন যেন বায়ু চলাচল ঠিক থাকে এবং ইনডোর পলিউশন কমে।

৩. বায়ুদূষণ এড়াতে মাস্ক ব্যবহার করুন –

বিশেষ করে শহরে বাইরে গেলে N95 বা ভালো মানের ফেস মাস্ক ব্যবহার করুন। যেসব এলাকায় গাড়ি বা কলকারখানার ধোঁয়া বেশি, সেসব এলাকা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

৪. পুষ্টিকর খাবার খান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করুন –

ফল, শাকসবজি, বাদাম ও হোল গ্রেইনসের মতো খাবারে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষকে ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা দেয়। প্রক্রিয়াজাত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।

৫. নিয়মিত শরীরচর্চা করুন –

নিয়মিত হাঁটা, যোগব্যায়াম বা হালকা ব্যায়াম ফুসফুসকে শক্তিশালী করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

৬. ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিরাপত্তা নিন-

যদি আপনি এমন কোনও পেশায় কাজ করেন যেখানে রসায়নজাত দ্রব্য বা আসবেস্টসের সংস্পর্শে আসতে হয়, তাহলে সুরক্ষামূলক মাস্ক ও পোশাক ব্যবহার করুন।

৭. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান-

পারিবারিক ইতিহাস থাকলে বা যদি দীর্ঘদিন ধুলাবালি ও ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকেন, তাহলে বছরে অন্তত একবার বুকের এক্স-রে বা চিকিৎসকের কাছে চেকআপ করান।

৮.প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন–

প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন, কারণ জল শরীর থেকে টক্সিন বের করে ফুসফুস পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

৯. আবহাওয়ার দূষণ হলে ঘরে থাকুন-

বিশেষত বাচ্চা ও বয়স্কদের জন্য ঘরে থাকা জরুরী কারণ বাচ্চাদের এবং বয়স্কদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।

১০. আলট্রাসনিক/রেডিয়েশন থেরাপির ইতিহাস থাকলে চিকিৎসকের নজরদারিতে থাকুন।

কারণ ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ এর মধ্যে একটি অন্যতম কারণ হিসেবে আলটরাসনিক/ রেডিয়েশন থেরাপি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

১১. শরীরে টক্সিক পদার্থ জমতে না দেওয়ার জন্য ডিটক্স ডায়েট মেনে চলুন।

১২. নিয়মিত প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘুরতে যান – পরিষ্কার বাতাসে শ্বাস নিন যাতে করে ফুসফুস পরিস্কার থাকে।

১৩. ধূমপায়ী বন্ধুদের উৎসাহ দিন ধূমপান ছাড়ার জন্য।

১৪. সচেতনতা বাড়ান –

নিজের পরিবার ও সমাজে এই বিষয়ে প্রচার করুন।

ভারতে ও বিশ্বে বর্তমানে ফুসফুস ক্যান্সারের পরিস্থিতি:

বিশ্বজুড়ে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে ফুসফুস ক্যান্সারকে ধরা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ২০ লাখ মানুষ ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং এর মধ্যে প্রায় ১৮ লাখের বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এটি স্পষ্টভাবে বোঝায় যে, ফুসফুস ক্যান্সার শুধুই একটি অসুখ নয়—এটি একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৪ সালের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী

বিশ্বে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে একজন মানুষ ফুসফুস ক্যান্সারে মারা যাচ্ছেন।

পুরুষদের মধ্যে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর শীর্ষে রয়েছে ফুসফুস ক্যান্সার।

নারীদের মধ্যেও এর ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে ধূমপানের হার বৃদ্ধির কারণে।

ভারতের পরিস্থিতি:

ভারতে ফুসফুস ক্যান্সার দিনে দিনে মারাত্মক রূপ নিচ্ছে। Indian Council of Medical Research (ICMR)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী:

প্রতি বছর ভারতে প্রায় ৮০,০০০-৯০,০০০ নতুন ফুসফুস ক্যান্সারের কেস ধরা পড়ে।

পুরুষদের মধ্যে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং নারীদের মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ ক্যান্সার।

প্রায় ৭০-৮০% রোগী যখন চিকিৎসা নিতে আসেন, তখন রোগটি শেষ পর্যায়ে থাকে।

ধূমপান, পরিবেশ দূষণ এবং কর্মস্থলে বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শ—এই তিনটি মূল কারণ ভারতে ফুসফুস ক্যান্সার বৃদ্ধির পেছনে দায়ী।

বিশেষ করে মহানগরগুলিতে যেমন দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা ও বেঙ্গালুরুতে বায়ুদূষণের কারণে ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। শিশু ও বৃদ্ধরাও আজ ঝুঁকির মুখে।

উপসংহার:

ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ শুধুমাত্র ধূমপান নয়। বরং দূষিত বাতাস, রাডন গ্যাস ও রাসায়নিক পদার্থও হতে পারে ফুসফুস ক্যান্সারের বড় কারণ। প্রতিরোধে জানুন গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা।

ফুসফুস ক্যান্সার শুধু ধূমপায়ীদের রোগ নয়—এটি আমাদের চারপাশের পরিবেশ, অভ্যাস ও জীবনযাপনের সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। ধূমপান না করেও যদি কেউ দূষিত বায়ু, রাসায়নিক পদার্থ বা পারিবারিক ঝুঁকির মধ্যে থাকে, তাহলে তার জন্যও এই রোগের আশঙ্কা থেকে যায়। তাই সময় থাকতেই সচেতন হওয়া, ঝুঁকির কারণগুলো চিহ্নিত করা এবং প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় কিছু স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনা খুবই জরুরি।

স্মরণে রাখো—প্রতিরোধই হলো ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র। নিজের এবং প্রিয়জনদের জন্য এখনই সতর্ক হও এবং সুস্থ জীবন গড়ে তোল।

প্রশ্নোত্তর (FAQ)

১. ফুসফুস ক্যান্সার কি শুধু ধূমপানের কারণে হয়?

না, ধূমপান ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান কারণ হলেও প্যাসিভ স্মোকিং, বায়ু দূষণ, রাডন গ্যাস, রাসায়নিক পদার্থ ও পারিবারিক ইতিহাস থেকেও এই ক্যান্সার হতে পারে।

২. ধূমপান না করেও কি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া সম্ভব?

হ্যাঁ, অনেকেই ধূমপান না করেও ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, বিশেষ করে যাঁরা দূষিত পরিবেশে থাকেন বা প্যাসিভ স্মোকিং-এর শিকার হন।

৩. ফুসফুস ক্যান্সারের প্রথম লক্ষণ কী কী?

প্রথম দিকের লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে দীর্ঘস্থায়ী কাশি, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, কণ্ঠে পরিবর্তন, অকারণে ওজন কমে যাওয়া ও ক্লান্তি।

৪. ফুসফুস ক্যান্সার কীভাবে নির্ণয় করা যায়?

চিকিৎসকের পরামর্শে বুকের এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, ব্রঙ্কোস্কপি বা বায়োপসির মাধ্যমে ফুসফুস ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়।

৫. রাডন গ্যাস কী এবং এটি কীভাবে ক্যান্সার সৃষ্টি করে?

রাডন গ্যাস হলো একটি প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় গ্যাস, যা মাটি ও পাথর থেকে নির্গত হয়। এটি ঘরের মধ্যে জমে গেলে শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে ফুসফুসে ক্ষতি করে।

৬. আসবেস্টস কীভাবে ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়?

আসবেস্টস হলো একধরনের খনিজ পদার্থ যা নির্মাণ সামগ্রীতে ব্যবহৃত হয়। এর ক্ষুদ্র কণাগুলি ফুসফুসে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

৭. ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধে কী ধরণের খাদ্য উপকারী?

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম ও হোল গ্রেইন ফুসফুসকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।

৮. কী ধরনের জীবনযাপন করলে ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে?

ধূমপান এড়ানো, পরিষ্কার বায়ুতে থাকা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৯. ফুসফুস ক্যান্সার কি সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য?

ফুসফুস ক্যান্সার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে এবং যথাযথ চিকিৎসা শুরু হয়, তাহলে নিরাময়ের সম্ভাবনা থাকে। তবে এটি নির্ভর করে ক্যান্সারের স্তর ও রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর।

১০. নিয়মিত কী কী চেকআপ করলে ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ আগেভাগে ধরা পড়তে পারে?

ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ আগেভাগে ধরতে হলে নিম্নলিখিত পরীক্ষা গুলো করার প্রয়োজন হয়।

বুকের এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, স্পুটাম টেস্ট ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ফাংশন টেস্ট ফুসফুসের অবস্থা জানতে সহায়ক।

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply