প্যানক্রিয়াস বা অগ্নাশয় কি ? পেন্রিয়াসির কাজ কাজ এবং প্যানক্রিয়াসকে ভালো রাখার সহজ উপায় (what is pancreas? Function of the pancreas and easy way to keep the pancreas good).

* প্যানক্রিয়াস কি ? প্রাণক্রিয়াস এর কাজ কি? প্যানক্রিয়াসকে ভালো রাখার সহজ উপায়:

ভূমিকা:- প্যানক্রিয়াস হল আমাদের শরীরের পেটের পাকস্থলির ঠিক নিচে অবস্থিত একটি আম পাতার মতো দেখতে একটি ছোট্ট অঙ্গ। এটিকে ইনসুলিনের ফ্যাক্টরি বলা হয়। যেখান থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ হয়ে আমাদের খাবারের সঙ্গে মিশে সমস্ত শর্করাকে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে কোষের পুষ্টি যোগায় এবং মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। আজকাল অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন অর্থাৎ অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ প্যানক্রিয়াসের সমস্যা সৃষ্টি করছে।

আজ আমরা জানবো-

১. প্যানক্রিয়াস কি?

২. প্যানক্রিয়াসের কাজ কি ?

৩. প্যানক্রিয়াসকে সুস্থ রাখার সহজ উপায়

* প্যানক্রিয়াস কি?

প্যানক্রিয়াস হল আমাদের শরীরের পেটের ঠিক পিছনে এবং লিভারের ঠিক নিচে পাকস্থলির সাথে যুক্ত থাকে। আমাদের শরীরে অবস্থিত অঙ্গ টি কতেকটা আম পাতার মতো দেখতে একটি ছোট্ট অঙ্গ। এটি মানব দেহের ক্ষুদ্রতম অঙ্গ হলেও এর ভূমিকা অনেক বৃহত্তম।

এটির আকার ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি লম্বা হয়। এর ওজন ৭০ থেকে ১০০ গ্রাম হয়। এটি লিভারের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রন্থি হিসাবে পরিচিত। এটি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।

* প্যানক্রিয়াসের কাজ কি?

প্যানক্রিয়াসের প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ:-

১. হরমোন নিঃসরণকরা: যেমন ইনসুলিন।

প্যানক্রিয়াস ইনসুলিন নামক একটি হরমোন নিঃসরণ করে। যে ইনসুলিন আমাদের প্রতিটি কোষকে এবং প্রতিটি অঙ্গ কে অর্থাৎ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে। আমরা যে পরিমাণ খাবার খাই প্যানক্রিয়াস সেই  খাবারের প্রয়োজনমতো ইনসুলিন সিক্রেশন করে বা নিঃসরণ করে এবং খাবারের সঙ্গে মিশে গিয়ে প্রতিটি কোষকে পুস্টি যোগায় যে পুষ্টির কারণে আমরা বেঁচে থাকি। প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ না হলে খাদ্য থেকে পাওয়া শর্করা রক্তের সঙ্গে ভেসে বেড়াবে। এই শর্করা কোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে ইনসুলিন । ইনসুলিন যদি সাহায্য না করে তাহলে রক্তের মধ্যে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে একটি ডায়াবেটিক পেশেন্ট তৈরি করে। ইনসুলিন কম পরিমাণে নিঃসরণ হওয়ার জন্য ডায়াবেটিক পেশেন্টরূপে আবির্ভূত হয়। এইবার একটি প্রশ্ন উঠবে তাহলে ইনসুলিন কম নিঃসরণ হয় কেন। এটার উত্তর হল প্যানক্রিয়াসের ক্ষমতা অনুযায়ী ইনসুলিন নিঃসরণ করে। কিছু কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে ইনসুলিন কম নিঃসরণ হওয়ার কারণ আমরা পরে জানব।

২. হজমে সাহায্য করা:

প্যানক্রিয়াস আমাদের খাবার হজম করতে সাহায্য করে। প্যানক্রিয়াস আমাদের খাবার কিভাবে হজম করে আমরা আজকে জানবো। প্যানক্রিয়াসের মধ্যেই অবস্থিত একটি exocrine gland কয়েকটি হরমোন নিঃসরণ করে। যেমন – (ক) অ্যামাইলেজ, (খ) লিপেজ,(গ) প্রোটিজ

(ক) অ্যামাইলেজ কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা কে ভেঙে সহজ সরকরায় পরিণত করে।

(খ) লিপেজ চর্বিকে ভেঙে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে রূপান্তর করে।

(গ) প্রোটিজ বা ট্রিপসিন ও কাইমো টিপসিন প্রোটিনকে ভেঙে অ্যামাইনো অ্যাসিডে রূপান্তর করে।

এই এনজাইম গুলোকে প্যানক্রিয়াটিক জুস বলা হয়। এই প্যানক্রিয়াটিক জুস ইন্টেস্টাইনে অর্থাৎ স্মল ইন্টেস্টাইনে বা ক্ষুদ্রান্তে প্রবাহিত হয়ে খাবার হজম করতে সাহায্য করে। খাবার যখন ক্ষুদ্রান্তে পৌঁছায় তখন সিকরেটিন নামক একটি হরমোন প্যানক্রিয়াসকে উদ্দীপিত করে। এবং ওই সময় প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন পরিমাণ মতো নিঃসরণ হয় এবং খাবারে সঙ্গে মিশে যায়। এইভাবে খাবারের সঙ্গে ইনসুলিন মিশে গিয়ে হজমে সাহায্য করে।

প্যানক্রিয়াসকে সুস্থ রাখার সহজ উপায়:-

প্রাণপ্রিয়াসকে সুস্থ রাখতে কিছু সহজ পদ্ধতি বা অভ্যাস অনুসরণ করুন।

১. সঠিক খাবার খান: ফলমূল সবুজ শাকসবজি, বাদাম, মাছ এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যুক্ত খাবার খান। অর্থাৎ শর্করার পরিমাণ কমান। যেমন চিনি ফাস্টফুড, অতিরিক্ত ভাত, অতিরিক্ত রুটি খাবেন না। অর্থাৎ বেশি প্রক্রিয়াজাত খাবার খাবেন না। প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি খান। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যুক্ত খাবার খান । যেমন ওটস ব্রাউন রাইস এবং ডাল জাতীয় খাবার খেয়ে পেট ভরিয়ে রাখুন

২. ধূমপান এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলুন:

অতিরিক্ত ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান আমাদের শরীরের প্যানক্রিয়াসের অত্যন্ত ক্ষতি করে। এর ফলে প্যানক্রিয়াটাইটিস এবং ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৩. পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন:

প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লিটার জল পান করুন। প্যানক্রিয়াসে এন্টিঅক্সিডেন্ট তৈরি করতে এবং প্যানক্রিয়াস থেকে বিষ পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এই জল। তাই নিয়মিত জল পান করুন।

৪. নিয়মিত শরীরচর্চা অর্থাৎ ব্যায়াম করুন:

প্রতিদিন আধ ঘন্টা থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটুন, দৌড়ান, যোগ ব্যায়াম করুন। কপাল ভারতি ব্যায়াম অর্থাৎ পেট কাঁপানো ব্যায়াম প্যানক্রিয়াসকে মুভমেন্ট করিয়ে প্যানক্রিয়াসকে সুস্থ রাখে। প্যানক্রিয়াস সুস্থ থাকলে শরীর সুস্থ থাকবে । যোগ ব্যায়াম করার ফলে শরীর সুস্থ থাকলে প্যানক্রিয়া সুস্থ থাকবে। যোগ ব্যায়াম করলে এবং হাঁটলে এবং দৌড়ালে শরীরের মধ্যে জমে থাকা অতিরিক্ত শর্করা খরচ হয়ে যায় যার ফলে রক্তকে অনেকটা শর্করা থেকে চাপমুক্ত করে।

৫. মানসিক চাপ কমান:

মানসিক চাপ কমাতে প্রাণায়াম করুন যোগ ব্যায়াম করুন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান। প্রতিদিন কুড়ি মিনিট প্রাণায়াম করুন আধঘন্টা যোগ ব্যায়াম করুন এবং ছয় থেকে আট ঘন্টা ঘুমান। যারা কম পরিশ্রম করেন তারা কমপক্ষে ছয় ঘন্টা ঘুমান এবং যারা কঠোর পরিশ্রম করেন তারা কম করে ৮ ঘণ্টা ঘুমান। পরিমাণ মতো ঘুমোলে মানসিক চাপ কমায় এবং হরমোনের ব্যালেন্স কে বজায় রাখে।

৬. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন:

যদি পেট ব্যথা করে এবং হজমে সমস্যা হয় তাহলে অবহেলা না করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে বা খেলে শরীরে মেদ জমতে থাকে। আর অতিরিক্ত মেদ একদিন ডায়াবেটিস পেশেন্টে পরিণত করে। তাই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি খাবার তালিকা তৈরি করে নিন।

শেষ কথা:-

প্যানক্রিয়াসকে বাংলা ভাষায় অগ্নাশয় বলা হয় এই প্যানক্রিয়াস বা আপনার হয় আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। প্যানক্রিয়াসের প্রধান কাজ হল ইনসুলিন নিঃসরণ করা, হজমে সাহায্য করা এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা। আমাদের জীবনযাত্রা (Life style) স্বাস্থ্যকর করে তুললে প্যানক্রিয়াস সুস্থ থাকবে এবং প্রিয় থাকবে। প্রতিনিয়ত নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিস তো শরীরে স্থান পাবেই না সাথে সাথে অন্যান্য জটিল রোগ থেকে দূরে থাকা যাবে। অর্থাৎ কোন ধরনের জটিল রোগ শরীরে প্রবেশ করতে পারবে না। রক্তে যদি শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় তাহলে ধীরে ধীরে অন্যান্য বড় বড় রোগ যেমন হৃদরোগ কিডনির রোগ চোখের রোগ স্নায়ুর রোগ ইত্যাদি রোগ গুলি যুক্তি করে হাত ধরে একের পর এক আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। আরো বিস্তারিত জানতে নিচের বিষয়গুলির উপর নজর দিন।

Leave a Reply